দুর্গাপুর দর্পণ ডেস্ক, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২: ঘন জঙ্গল। সূর্যের আলো ঢোকে না। জঙ্গল ঠেলে খুব ভিতরে ঢোকা যায় না। চারিদিকে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। জাপানের (Japan) হনশু দ্বীপের ফুজি পাহাড়ের পাদদেশে ৩০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে রয়েছে আওকিগাহারা নামের (Mystery of Aokigahara Forest) এই অরণ্য (ghosts of the dead in Japanese mythology)।
হাজার হাজার গাছ রয়েছে সেখানে। তবে অনেকেই এই জঙ্গলকে শয়তানের বন (Devil’s Forest) বলে মনে করেন। কারণ, আত্মহত্যা (Suicide) করার জন্য অনেকেই বেছে নেন এই অরণ্যকেই। গড়ে প্রতি বছর এই বন থেকে ৫০ টির বেশি মৃতদেহের হদিস মেলে। বনে ছডিয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বহু কঙ্কাল, ব্যবহৃত জামা-কাপড়, ব্যাগ, ঘড়ি, জুতো। জঙ্গলের বাইরে পড়ে আছে বহু পরিত্যক্ত গাড়ি। সেই গাড়িগুলিতে চড়েই এই অরণ্যে এসেছিলেন গাড়ির মালিকেরা। তারপর আর ফিরে যাননি।
অরণ্যে ঢোকার মুখে বোর্ড। তাতে লেখা, ‘তোমার জীবন মহামূল্যবান উপহারস্বরূপ। শান্তমনে একবার হলেও ভাই, বোন, সন্তান ও পরিবারের কথা ভাবো।’ আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়ে ফেলা কেউ যদি এই লেখা পড়ে সিদ্ধান্ত বদলান, সেই আশা থেকেই এই বোর্ড লাগিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। আসলে, এই অরণ্যের সঙ্গে আত্মহত্যা শব্দটি (The strange saga of Aokigahara Forest in Japan) কালে কালে যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছে।
অনেকের মত হল, একটি জাপানি উপন্যাসে প্রেমিক-প্রেমিকা আত্মহত্যার জন্য বেছে নিয়েছিলেন এই অরণ্যকেই। উপন্যাস পড়ে, বিশেষ করে প্রেমে ব্যর্থ মানুষ সেই থেকে এই অরণ্যকেই আত্মহত্যার জায়গা হিসাবে বাছতে শুরু করে দেন। একসময় সেখানকার সরকার উপন্যাসটিকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেন। পরের দিকে আরও একটি বইয়েও আত্মহত্যার যথার্থ স্থান হিসাবে এই অরণ্যকেই উল্লেখ করা হয়েছিল। বইটির নাম ছিল-কমপ্লিট সুইসাইড ম্যানুয়াল। তারপর থেকে ওই অরণ্যে আত্মহত্যা করা বেশ কয়েকটি দেহের পাশে বইটিকে পাওয়া যায়। পরে সরকার সেটিও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০২ সালে এই অরণ্যে ৭৮ টি দেহ মেলে। ২০০৩ সালে একশোটি ও ২০০৪ সালে ১০৮ টি দেহ পাওয়া যায় ওই অরণ্যে। ২০১০ সালে রেকর্ড ২৪৭ জনের দেহ মেলে। অধিকাংশ দেহই ছিল গাছে ঝুলন্ত অবস্থায়। মনোবিদরা বলেন, হয়তো ঘন সবুজের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলার পরে আর বাইরের পৃথিবীর প্রতি টান অনুভব করেন না অবসাদগ্রস্ত মানুষজন। শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
মনোবিদদের অনেকে মনে করেন, জাপানে জনসংখ্যার হার কমার দরুণ মানুষ দিন দিন একলা হয়ে পড়ছে। একটা বয়সের পরে তাঁদের মধ্যে অসহায় ভাব ফুটে উঠছে। বাড়ছে বিষণ্ণতা। হয়তো একাকীত্ব থেকে বাঁচতে, মৃত কাছের মানুষের সঙ্গে মৃত্যুর পরে ফের যোগাযোগ হবে এই আশায় কেউ কেউ আত্মঘাতী হচ্ছেন ওই অরণ্যে (Suicide Forest)। তবে সঠিক কারণ কি, সেটা আজও রহস্যই! (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)।
One Reply to “‘শয়তানের বন’ আওকিগাহারা অরণ্য! ভয়াবহ রহস্য লুকিয়ে গহিন জঙ্গলে”
Comments are closed.