গালিবের গল্প শোনায় মশগুল দুর্গাপুর

দুর্গাপুর দর্পণ, দুর্গাপুর: পশ্চিম বর্ধমান (Paschim Bardhaman) জেলার দুর্গাপুরে শনিবার সন্ধ্যায় ‘মূর্তবিমূর্ত পত্রিকা’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল সুপর্ণা দেব দাস্তানগো। দাস্তানগো হল মধ্যপ্রাচ্যের একটি হারিয়ে যাওয়া শিল্প, উর্দু গল্প বলার শিল্প ফর্ম। সহজ কথায়, স্মৃতি থেকে গল্প বলা। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে এর উৎপত্তি। ঘরোয়া পরিবেশে সিটি সেন্টারের চিকিৎসক শর্মিষ্ঠা দাস ও কাজল দাসের বাড়িতে দাস্তানগো পরিবেশন করলেন সুপর্ণা দেব। অনুষ্ঠানের নাম ‘গালিবের সাঁঝ’। প্রেমের কবি মির্জা গালিব ধরা দিলেন যেন বাস্তবের চরিত্র হয়ে।
শুরুতেই ফুটে উঠল এই শিল্পের ঐতিহ্য। কথকঠাকুরানী বললেন, মির্জা গালিব সাব আপনি কি আজ আসবেন আমাদের এই আসরে? গালিবজী বললেন, আকাশে কি মেঘ আছে? যদি বৃষ্টি নামে তাহলে আসব। শ্রোতাকুলকে এক আবেশের মধ্যে নিয়ে গেলেন। সাদা কুর্তা পাজামা পরিহিত সুপর্ণা, পাশে গায়েন ঋষিতা সাহা, বায়েন সুতনু সরকার। অনুষ্ঠান শেষ হওয়া না পর্যন্ত তাঁরা আসন ছেড়ে নামেন না, এটাই রীতি। নির্দিষ্ট আসন, নির্দিষ্ট সাদা পোশাক। সামনে রাখা জল চৌকি। তাতে রাখা লম্ফ। কাঁচের পাত্রে জ্বলছে মোমবাতি। হাতে জুঁই ফুলের মালা। গল্প বলে চললেন সুপর্ণা। ইতিহাস যেন চার দেওয়ালের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। মাঝে মাঝে আসছে শায়েরী। দুর্দান্ত উর্দু উচ্চারণে। সঙ্গে আছেন একজন গায়েন। গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গাইছেন গজল। বায়েন ঠাকুরের এসরাজের সুর মোহিত করে তুলছে শ্রোতাদের। জানা গেল, এই গায়েন ও বায়েনের সংযোজন সুপর্ণার নিজস্ব মস্তিস্ক প্রসূত।
মির্জা গালিবের বাড়ি ছেড়ে দিল্লি আসার গল্প, স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক, উদ্দাম প্রেম, ফার্সি সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা, তাঁর জীবন যুদ্ধের কাহিনী সব উঠে এল গল্পে। তখন মোঘল সামাজ্যের শেষ দিক। ইংরেজদের দখলদারি শুরু হয়েছে। সব ছুঁয়ে গেলেন কথকঠাকুরানী। শেষের দিকে অসুস্থ মির্জার শয্যাশায়ী অবস্থার যে বর্ণনা তিনি উপস্থাপন করলেন, তখন শ্রোতাদের অনেকের চোখে জল, মুখ থমথমে। নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তখন সত্যিই মেঘ ডাকছে। বৃষ্টির আওয়াজ আসছে জানলা দিয়ে।
সুপর্ণা একজন উচ্চ পদস্থ সিভিল সার্ভিস অফিসার ছিলেন। গত মার্চে তিনি অবসর নিয়েছেন। ইসলামিক সাহিত্য, শিল্প, স্থাপত্য বরাবরই তাঁর পছন্দের বিষয়। ২০১৮ সাল থেকে তিনি এই দাস্তানগো এর কাজ করছেন। দাস্তানগো নামক একটি বই-ও আছে তাঁর। মির্জা গালিব ছাড়াও তিনি রুমি (জালালউদ্দিন রুমি-একজন বিখ্যাত ফার্সি কবি ও সুফি সন্ত), রবীন্দ্রনাথের পরাবাস্তবের প্ল্যানচেট সহ আরও কিছু বিষয়ের উপরও তিনি দাস্তানগো পরিবেশন করেন। দাস্তানগো, দিল্লি দাস্তান সহ ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্য বিষয়ক একাধিক বই লিখেছেন সুপর্ণা। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লেখিকা তথা অধ্যাপিকা অহনা বিশ্বাস, পুর প্রশাসকমন্ডলীর চেয়ারম্যান অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় সহ বহু গুণীজন। (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)

