দুর্গাপুর, ২২ এপ্রিল ২০২৪: খেলতে খেলতে ডান চোখে তার বিঁধে গিয়েছিল। বকাবকির ভয়ে বাড়িতে কিছু জানায়নি ছয় বছরের রিয়াংশ। মাস তিনেক পরে একদিন পরিবারের লোকজন দেখেন, রিয়াংশের ডান চোখের মনির উপরে সরু সাদা দাগ। দৃষ্টিশক্তিও ক্রমশ কমছে। স্থানীয় একাধিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রিয়াংশকে। কিন্তু কেউ তার চোখের অস্ত্রোপচার করতে ঝুঁকি নিতে চাননি। রিয়াংশের ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি কার্যত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।
রিয়াংশদের বাড়ি ঝাড়খন্ডের গিরিডিতে। চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় পরিবারটি। খোঁজ খবর নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, পশ্চিম বর্ধমানের (Paschim Bardhaman) দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে আম্বেদকর সরণীতে বছর তিনেক আগে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের যাবতীয় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও পরিকাঠামো সমৃদ্ধ চোখের হাসপাতাল Dvita Eye Care। অনেক আশা নিয়ে রিয়াংশকে নিয়ে তার পরিবার শেষ পর্যন্ত সেখানেই আসে। পরবর্তী দিন দশেকের মধ্যেই বদলে যায় রিয়াংশের জীবন। রীতিমতো বাঁ চোখ বন্ধ করে শুধু ডান চোখের ভরসাতেই এখন দৌড়াতে পারছে সে!
(Dvita Eye Care। কলকাতার বাইরে সেরা চোখের হাসপাতাল। যোগাযোগ- 0343-6661111)
রিয়াংশের চোখের অস্ত্রোপচার করেছেন Dvita Eye Care এর চিকিৎসক ডাঃ অমিত কুমার দাস। তিনি জানান, পরীক্ষা করে দেখা যায়, রিয়াংশের চোখের যে অংশে তার বিঁধে ক্ষত তৈরি হয়েছিল, সেই জায়গাটি নিজে থেকেই পূরণ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মনির পিছনে যে লেন্স থাকে, সেই লেন্স সাদা হয়ে গিয়েছে। চোট লাগার জন্য ছানি পড়ে গিয়েছে। তাই সেই চোখ দিয়ে সে একবারেই কিছু দেখতে পাচ্ছে না। পরীক্ষা করার জন্য তার বাঁ চোখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেখা যায়, শুধু ডান চোখ দিয়ে সে আলো পর্যন্ত বুঝতে পারছে না। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘নো পারসেপসন অফ লাইট’, যার অর্থ, চোখের নার্ভ খারাপ হয়ে গিয়েছে। তাই আলোর উপস্থিতি ধরতে পারছে না। ফলে দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা কার্যত নেই বললেই চলে।
ডাঃ অমিত কুমার দাস জানান, এই পরিস্থিতিতে দৃষ্টিশক্তি ফেরার সম্ভাবনা ১ শতাংশেরও কম। সেই সামান্য সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই তিনি এগোতে থাকেন। ছানি অস্ত্রোপচার করতেই হবে তা না হলে পরবর্তীতে চোখের প্রেসার বেড়ে যাওয়া, গ্লুকোমা সহ অন্যান্য রোগ দেখা দিতে পারে। তাই, রিয়াংশ ও তার পরিবারের সবাইকে প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং করা হয়। এরপর রিয়াংশের ডান চোখের অস্ত্রোপচার করে ছানি সরিয়ে লেন্স লাগিয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় রিয়াংশকে।
অস্ত্রোপচার পরবর্তী প্রথম চেক আপের দিন চিকিৎসক তার চোখ পরীক্ষা করে আশাব্যঞ্জক ফল পাননি। কারণ, তখনও দেখা যায়, রিয়াংশ আলোর উপস্থিতি ধরতে পারছে না। ডাঃ অমিত কুমার দাস তখন মনে করতে শুরু করেন, আর বোধ হয় দৃষ্টিশক্তি ফেরার সম্ভাবনা নেই। তবু আশা ছাড়েননি তিনি। দিন তিনেক আগে দ্বিতীয়বার চেক আপের জন্য রিয়াংশকে আনা হয় হাসপাতালে। এবার চিকিৎসক বুঝতে পারেন, দৃষ্টিশক্তি অনেকটাই ফিরে এসেছে রিয়াংশের ডান চোখের। নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার বাঁ চোখ বন্ধ করে দিয়ে ডান চোখ খুলে হাঁটতে বলা হয়। রিয়াংশ দিব্যি নিজের হাতে দরজা খুলে হাসপাতালের করিডরে হাঁটতে থাকে। ডাঃ অমিত কুমার দাস পরীক্ষা করার জন্য তার পথের মাঝে চলে আসেন। দেখা যায়, রিয়াংশ তাঁকে এড়িয়ে পাশ দিয়ে চলে গেল। ডাঃ অমিত কুমার দাস বলেন, “তখন পুরোপুরি নিশ্চিত হই, রিয়াংশের দৃষ্টিশক্তি ফিরে এসেছে। রিয়াংশের পরিবার, চিকিৎসক হিসাবে আমি এবং হাসপাতালের সবাই, আমরা খুব খুশি।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রিয়াংশের ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি এখন (6/60)। (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)।