সনাতন গড়াই, দুর্গাপুর দর্পণ, দুর্গাপুর, ৯ মার্চ ২০২৪: কলকাতার বাইরে রাজ্যের এই অঞ্চলের প্রথম চক্ষু হাসপাতাল হিসাবে NABH এর স্বীকৃতি মিলেছে আগেই। সর্বভারতীয় ইংরাজি পত্রিকা ‘আউটলুক’ (Outlook India) এর সমীক্ষায় দেশের সেরা দশ চক্ষু হাসপাতালের তালিকায় অন্তর্ভূক্তি ঘটেছে। এবার কলকাতার বাইরে দক্ষিণবঙ্গ ও সংলগ্ন অঞ্চলের মধ্যে প্রথম চোখের মণি (কর্ণিয়া) প্রতিস্থাপনের কৃতিত্বের আধিকারী হল এই হাসপাতাল।
পশ্চিম বর্ধমানের (Paschim Bardhaman) দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে আম্বেদকর সরণীতে রয়েছে Dvita Eye Care। দক্ষিণবঙ্গ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহার, ঝাড়খন্ড থেকে রোগীরা আসেন এখানে। একদল প্রতিষ্ঠিত নামী বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকের পাশাপাশি এই হাসপাতালে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের যাবতীয় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা। হাসপাতালের চেয়ারপার্সন চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রিয়াংশা চট্টোপাধ্যায় জানান, দেশে বর্তমানে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মাানুষ কর্ণিয়া জনিত অন্ধত্বের শিকার। Dvita Eye Care কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই ধরণের অন্ধত্ব দূরীকরণের প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। কলকাতার একটি সংস্থার সঙ্গে এ’বিষয়ে ‘মউ’ সাক্ষর করেছেন কর্তৃপক্ষ।
(Dvita Eye Care। কলকাতার বাইরে সেরা চোখের হাসপাতাল। যোগাযোগ- 0343-6661111)
কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন কী? চোখের সামনের স্বচ্ছ অংশকে বলে কর্নিয়া। কর্নিয়ার মধ্য দিয়ে চোখের মধ্যে আলোকরশ্মি প্রবেশ করে ও রেটিনাতে কেন্দ্রীভূত হয়। আঘাত বা অসুস্থতার কারণে কর্নিয়া অস্বচ্ছ হয়ে গেলে মানুষের মধ্যে দৃষ্টিহীনতা দেখা যায়। এক মাত্র কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি ফেরানো সম্ভব। মোট ৫টি স্তর রয়েছে কর্নিয়ার। সেগুলি আলাদা করে তুলে ফেলা সম্ভব। আগে কারও কর্নিয়া নষ্ট হয়ে গেলে মৃতদেহের চোখ থেকে সম্পূর্ণ কর্নিয়া তুলে প্রতিস্থাপন করা হত। এখন যে লেয়ারটি নষ্ট হয়েছে শুধু সেটি তুলেই প্রতিস্থাপন সম্ভব। ফলে, একটা চোখের কর্নিয়া দিয়ে দু’তিন জন মানুষের চোখের দৃষ্টি ফেরানো সম্ভব। হাসপাতালের চিকিৎসক গায়ত্রী কানুনগো জানান, মরণোত্তর চক্ষুদানে ইচ্ছুক ব্যক্তির মৃত্যুর ৪-৫ ঘন্টার মধ্যে কর্ণিয়া সংগ্রহ করা যায়।
অন্ডালের মদনপুরের ৬৭ বছরের মহিলা চায়না মুখোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে চোখের সংক্রমণে ভুগছিলেন। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। বহু হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও ফল মেলেনি। শেষ পর্যন্ত গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর তিনি চোখে অসহ্য ব্যথা ও সংক্রমণ নিয়ে যোগাযোগ করেন Dvita Eye Care এর সঙ্গে। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, সংক্রমণের জেরে রীতিমতো পুঁজ জমে গিয়েছে। প্রথমে চিকিৎসকেরা প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকস, আই ড্রপ দিয়ে সংক্রমণ রোধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কর্ণিয়াল এপিথেলিয়াল সংক্রমণ রোধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা।
কলকাতার সংস্থা থেকে কর্ণিয়া আনা হয়। সংক্রমিত কর্ণিয়া তুলে ফেলে সেখানে নতুন কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়। অস্ত্রোপচারের পরদিনই রোগীর মুখে হাসি দেখে আশ্বস্ত হন চিকিৎসকেরা। চায়নাদেবী জানান, তাঁর চোখে ব্যথা প্রায় নেই। চোখে জল পড়াও বন্ধ হয়েছে। চিকিৎসক অমিত কুমার দাস জানিয়েছেন, তাঁর চোখে ছানির সমস্যা রয়েছে। কিন্তু সংক্রমণের আশঙ্কায় এখন ছানি অস্ত্রোপচার করা হয়নি। পরিস্থিতির উন্নতি হলে ৬-৮ মাস পরে ছানি অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হবে। চায়নাদেবী বলেন, ‘‘আমি এখন অনেক সুস্থ আছি। দুশ্চিন্তা কেটেছে।’’ চায়নাদেবীর জা নুপুরদেবী বলেন, ‘‘হাসপাতালের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’’ Dvita Eye Care হাসপাতাল গড়ে তোলার নেপথ্যে রয়েছেন মিশন হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ সত্যজিৎ বসু। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম বারের মতো এখানে কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করা হল। প্রতিস্থাপনের খরচ আমি বহন করেছি।’’ (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)।