সাত পুতুলের পুজোর মধ্যে দিয়েই মানকরে শুরু নবান্ন উৎসব
দুর্গাপুর দর্পণ, মানকর, ৮ ডিসেম্বর ২০২১: দেবী অন্নপূর্ণা পুজোর মাধ্যমে মানকরে শুরু হল গ্রাম বাংলার নিজস্ব উৎসব নবান্ন। মানকরে সাত পুতুলের পুজোর মাধ্যমে দেবী অন্নপূর্ণাকে পুজো করা হয়। পুজোর সঙ্গে যুক্ত বলাই হালদার, নবকুমার চ্যাটার্জী, তপন খাঁ প্রমুখ জানান, দেড়শো বছরেরও প্রাচীন এই পুজো। দেবীর মূর্তির বিশেষত্ব হল, দেবীর ডানদিকে রয়েছেন মহাদেব, বামদিকে দেবরাজ ইন্দ্র। উপরে দুই পাশে দুই পরী এবং নিচে জয়া ও বিজয়া।
মানকরের তাঁতিপাড়া, নায়েক পাড়া, দাস পাড়া, চৌরঙ্গী সহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা এই পুজোয় উপস্থিত থাকেন। নিতাই নন্দী, লাল গাঙ্গুলী’রা জানান, আগে সাত দিন ধরে এই পুজো হত। পাড়ার এক এক জন সারাদিনের পুজোর খরচ বহন করতেন। এখন অবশ্য তা হয় না। বর্তমানে তিনদিন পুজো হয়। প্রথমদিনে নবান্ন পুজো, দ্বিতীয় দিনে খিচুড়ি ভোগ দেবীকে নিবেদন করা হয় এবং ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ দেওয়া হয়। তৃতীয় দিনে চিঁড়ে ভোগ নিবেদন করে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।
রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র দেবী অন্নপূর্ণার মাহাত্ম্য বর্ণনা করে অন্নদামঙ্গলকাব্য রচনা করেছেন। বলা হচ্ছে, কৈলাশে শিব ও পার্বতী বেশ সুখেই ছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই আর্থিক অনটন শুরু হয়। তার জেরে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। দারিদ্র্যের কারণে পার্বতীর তিরস্কারে ঘর ছেড়ে ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু কোথাও ভিক্ষে পেলেন না। শেষে ব্যর্থ হয়ে কৈলাশে ফেরেন শিব।
দেবীর মায়ায় শিব ভিক্ষে পাননি। দেবী স্বয়ং শিবকে ভিক্ষা দেন। শিব দেবীর মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে কাশীতে একটি মন্দির স্থাপন করেন। গ্রাম বাংলাতেও দেবী অন্নপূর্ণার পুজোর ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। বলাইবাবু জানান, প্রায় শ’তিনেক মানুষকে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। নতুন প্রজন্মের গৌরাঙ্গ হালদার জানান, মায়ের পুজো শুরু হয়েছে। তবে এবারে শোষক ও অকাল বৃষ্টিতে চাষীদের অবস্থা খুবই খারাপ।