‘সুব্রত মুখোপাধ্যায়’, স্মৃতিচারণায় এমএএমসি মর্ডান হাইস্কুলের প্রিন্সিপ্যাল তরুণ ভট্টাচার্য
বর্ধমান জেলার সঙ্গে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নাড়ির যোগ। বর্ধমানের নাদনঘাটে ন’পাড়ার একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন তিনি। তাঁর হঠাৎ চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না তাঁর অনুগামীরা। সত্তরের দশকে যাঁরা ছাত্র রাজনীতি করতেন, তাঁদের অনুপ্রেরণা ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। দুর্গাপুরের এমএএমসি মর্ডান হাই স্কুলের প্রিন্সিপাল তরুণ ভট্টাচার্যের ছাত্র রাজনীতির অনুপ্রেরণা সুব্রত মুখোপাধ্যায় । দুর্গাপুর দর্পণ- এ তরুণবাবুর কলমে সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
বঙ্গ রাজনীতির নক্ষত্র পতন। সোনার বাংলার ছেলে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সদা হাস্যময় স্পষ্টবাদী সুপুরুষ স্মার্ট ছাত্রনেতা আমাদের সুব্রতদা। আমাদের ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার অনুপ্রেরণা তিনি। নাদনঘাটের ন’পাড়ার ছেলে। মামা বাড়ি মন্তেশ্বর বিধানসভার মন্ডল গ্রামে। বাবার চাকরি সূত্রে ২৪ পরগনায় চলে যান। কিন্তু বর্ধমান জেলা ছিল তাঁর অন্তরে। মামাবাড়িতে মাঝে মধ্যেই আসতেন। বর্ধমানের ছেলে আমি, তাই দেখা হলেই খোঁজ-খবর নিতেন।
তরুণ তুর্কী এই নেতার হাত ধরেই তৈরী হয়েছে বহু নেতা নেতৃত্ব। এক অর্থে বর্তমানে যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন, বেশির ভাগই সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিতে এসেছেন। বাংলার রাজনীতিতে এঁদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে পুত্রসম স্নেহ করতেন। তাঁর বাড়িতে সুব্রতদার ছিল অবারিত দ্বার। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে এক সঙ্গে হেলিকপ্টারেও ভ্রমণ করেছেন। আশির দশকের প্রথমদিকে কলকাতায় এআইসিসি অধিবেশনে তাঁর ক্রিয়াকর্ম আজও মন পড়ে। নানান ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। আমরা যারা ছাত্র রাজনীতি করতাম, সুব্রতদাকে অনুসরণ করতাম। ইন্দিরা গান্ধীর অকাল প্রয়াণ রাজনৈতিকভাবে ওনাকে কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছিল। মানসিকভাবে সামলে উঠতে সময় লেগেছিল।
সুব্রতদার সময় অবিভক্ত বর্ধমান জেলা ছাত্র পরিষদের সভাপতি ছিলেন অরূপ দাস ও প্রয়াত অজিতদা (বন্দ্যোপাধ্যায়) শ্রমিক কংগ্রেসের সভাপতি আর দুর্গাপুরে মৃগেনদা (পাল)। যে সময়ে বাম সরকার মধ্য গগনে তখন তাদের চোখে চোখ রেখে সরকার বিরোধী ছাত্র রাজনীতি করতে নানান হেনস্তা ও অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছিল আমাদের। যার প্রভাব পড়েছিল পড়াশোনায় ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। সব সময়েই সুব্রতদাকে পাশে পেয়েছি। তিনি ভরসা জুগিয়েছেন। পরবর্তীকালে আমরা অনেকেই সক্রিয় রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে সরে এসেছি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে সুব্রতদার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। যখনই বিপদে পড়েছি তখনই তিনি পাশে থেকেছেন দাদার মতো।
মাত্র ৭৫ বছর বয়েসে তাঁর চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। বাংলার রাজনৈতিক জগতে অপূরনীয় ক্ষতি। ভালো থাকুন দাদা। শতকোটি প্রণাম দাদা।
(বিষয় বা মতামত একেবারেই লেখকের ব্যক্তিগত। তার দায় দুর্গাপুর দর্পণ কর্তৃপক্ষের নয়।)