লকডাউন আর করোনার ভয়ে ঘরে বসে বসেই কেটে গেল ছয় মাস। কোথাও বেড়াতে যাওয়া নেই। প্রিয়জনের বাড়ি যাওয়া বন্ধ। অতিমারির জেরে হঠাৎ স্তব্ধ ব্যস্তজীবন। তবে এবার একটু একটু করে জীবনে ফিরছে ছন্দ। তাই, একদিনের জন্য মন ভালো করা ট্যুরে গেলে ক্ষতি কি!
ভালকি মাচান
সবুজ ঘন বন বা পাহাড়-সমুদ্রের ব্যপকতা, সবই বাঙালি মনকে মাতিয়ে রাখে। কিন্তু পরিস্থিতির খাতিরে সুদূরের পিয়াসী মনকে কাছে-পিঠেই ধাতস্থ করতে হবে। সবুজ ঘন বন। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। প্রাণভরা বাতাস। শাল, পিয়াল, সেগুন, দেবদারু, মহুয়া, সোনাঝুরি, হরিতকীর জঙ্গল। পাশে বিশাল জলাশয়। আর নানান ধরণের পাখি। সব কিছু এক আঙিনায়।

জায়গার নাম ভাল্কি মাচান। লাল মাটির বুকে অদ্ভুত শান্তি। ইতিহাস অনুসারে, বর্গী আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে বর্ধমানের রাজারা তাঁদের নিজেদের এলাকার বিভিন্ন জায়গায় গড় তৈরী করেছিলেন। মাচান অর্থাৎ ইটের তৈরি মিনার রয়েছে জঙ্গলের কিনারায়। যা গড় নামে পরিচিত। এখন সেই মিনারের চারপাশে মাটির ঢিবি, কাঁটাঝোপ। মাঝে একটি কুয়োর মত অংশ আছে। বিপদ এড়াতে তা ঢেকে দেওয়া হয়েছে লোহার জাল দিয়ে। বলা হয়ে থাকে, এটি হয়তো কোনও সুড়ঙ্গ পথ। জঙ্গলের মাঝে মাঝে আদিবাসী গ্রাম।
কিভাবে যাবেন
বর্ধমান লোকাল ধরে পারাজ স্টেশন থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে ভালকি মাচান। এখন ট্রেন বন্ধ। অগত্যা গাড়ি করে যাওয়াই শ্রেয়। দুর্গাপুর থেকে যেতে হলে, ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বুদবুদ, মানকর হয়ে অভিরামপুর। সেখান থেকে সামান্য দূরেই ভালকি মাচান। ছোট ছোট জনপদ পেরিয়ে, রাস্তায় বসে থাকা ছাগল ছানাদের সরিয়ে সোজা পিচের রাস্তা ধরে যাওয়া যায় ভালকি মাচানে।
কোথায় থাকবেন
পাকা রাস্তার পাশেই সামান্য লাল কাঁকুড়ে পথ বেয়ে রাস্তার পাশেই ‘অরণ্যসুন্দরী’। এই নামেই ছোট্ট দোতলা অতিথি নিবাস। সাজানো গোছানো। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আছে সেখানেই। দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে আউসগ্রাম ২ নং পঞ্চায়েত সমিতি।

কেন যাবেন
সন্ধ্যা নামলে জঙ্গল জুড়ে শুধুই অন্ধকার। বিদ্যুতের আলো বুকে নিয়ে জেগে থাকে শুধু অরণ্য সুন্দরী। দূর থেকে শোনা যায় আদিবাসীদের ধামসা-মাদলের আওয়াজ। সন্ধ্যায় আদিবাসী নাচের দলের সঙ্গে কোমর দোলাতে চান নাকি! সে ব্যবস্থাও আছে। আগে থেকে বলে রাখতে হবে। হাতে পকোড়া আর চায়ের প্লেট নিয়ে আদিবাসী সংস্কৃতির নাচ দেখার পরে নিজেও একবার নেচে নেবেন তাঁদের সঙ্গে। জীবনের এক বিরল অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে সেই সময়টুকু।
সকালে ঘুম থেকে উঠে হেঁটে গড়ে ঘুরে এলেন। আরও কিছুটা এগিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য জঙ্গলের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারেন। এরপর জলখাবার খেয়ে নিরিবিলিতে বসে বিশাল জলাশয়ে মাছ ধরতে পারেন। জলাশয়ের পাড়ে বাগান, বিভিন্ন ধরণের গাছপালা। অত্যন্ত মনোরম এক পরিবেশে। রংবেরঙের ফুলের বাগানের মাঝে কংক্রীটের ছাতার নীচে বসে নানা রকম পাখির ডাক শুনতে শুনতে মনটা উদাস হয়ে যায়। জলাশয়ে বোটিংয়ের ব্যবস্থাও আছে।
কখন যাবেন
অক্টোবর পর্যন্ত যেতে গেলে ফিরতে হবে দিনে দিনে। খাবার নিয়ে যেতে হবে বাড়ি থেকে। তবে অক্টোবর থেকে বুকিং চালু হয়ে যাচ্ছে। তখন তো শুধু একবার সেখানে যেতে পারলেই হল। খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে ওখানেই।
দুর্গাপুজো এবার অন্যরকম। তাই সেই চারদিন ভালকি মাচানে থাকুন। সঙ্গে রাখুন একটা গাড়ি। গাড়ি করে আশপাশের এলাকার বিভিন্ন বনেদী বাড়ির পুজোগুলি চারদিন ধরে ঘুরে দেখে নেবেন। ভিড় নেই, কোলাহল নেই। শান্ত-নিরিবিলি পরিবেশে এবারের দুর্গাপুজো, মনে থাকবে সারা জীবন।
যোগাযোগ
9153420133, 9434537545, 0343-20064