আউশগ্রাম: যেখানে নারীদের সম্মান নিয়ে হাজারো প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সেখানে দেহজীবী মা-দের পুজো করে শুরু হবে দুর্গাপুজো। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের জঙ্গলমহলে অজয়ের তীরে প্রাচীন ধ্বংস হয়ে যাওয়া গ্রাম গোপালপুর, উল্লাসপুর। পাশাপাশি দুটি ছোট গ্রাম। সেখানকার বাসিন্দা, লেখক রাধামাধব মণ্ডলের উদ্যোগে ‘গোপালপুর উল্লাসপুর সার্বজনীন দুর্গোৎসবের’ আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রতি বছর অভিনবত্বের নজির রাখে আউশগ্রামের এই পুজো কমিটি। এবার চতুর্থীতে উদ্বোধনী মঞ্চে পুজো করা হবে দুজন দেহজীবীকে।
রাধামাধব বলেন, “পাশাপাশি জমিদারদের গ্রামে পুজো হয় আড়ম্বর করে। সেখানে আমাদের গ্রামের নিরন্নদের কোনও অংশগ্রহণ থাকে না। একটু প্রসাদের জন্য তারা লালায়িত। কেউ হাতে তুলে দেয়নি ভালবেসে।” তাই গ্রামের খেতমজুরদের একদিনের আয় দিয়ে শুরু হয়েছিল পুজো। তবে শেষ কয়েক বছর ধরে সরকারি অনুদান মিলছে। গত বছর এই পুজো কমিটির উদ্বোধনে এসেছিলেন বৃহন্নলাদের একটি দল। তাদের পুজো করেছিলেন গোপালপুর, উল্লাসপুর গ্রামের বাসিন্দারা। তার আগের বছর ২০২২ সালে গ্রামের দুজন কৃষককে পুজোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল পুজো।
পুজো কমিটির অন্যতম সদস্যা রাখী মণ্ডল বলেন, “আমাদের দুটি ছোট গ্রাম অজয়ের বন্যায় একাধিক বার ধ্বংস হয়েছে। গ্রামের বহু মানুষ চলে গেছে বীরভূমের হালসিডাঙা, শ্রীচন্দ্রপুর, সেনকাপুর গ্রামগুলিতে। একাধিক বার মহামারির কবলে পড়েছে গ্রাম। গ্রামের ১৮ পাড়া বর্তমানে ৫ পাড়াতে এসে দাঁড়িয়েছে। গ্রামের বর্তমান ৫৬ টি পরিবার, যার মধ্যে অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষজন বেশি। তাদের নিয়ে শুরু হয় পুজো। কালোসোনা মেটে, অজয় মেটে, পরিধন কর্মকার, নিমাই মেটে, প্রদীপ ঘোষ, রতন কর্মকার, মিতালী, তুলিকা মণ্ডল সহ নানা মানুষের দান এনে শুরু হয় পুজো। পরে সরকারি সাহায্যও মেলে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে।”
( BCREC & Group of institutions । পূর্ব ভারতের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 933927844, 9832131164, 9932245570, 9434250472)
এবার গুহার মধ্যে দেবীকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পুজোর দুই মাস আগে থেকেই এখানে দেবী প্রতিমা নির্মাণ করে গেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মল্লারপুরের মৃৎশিল্পী নিতাই সুত্রধর। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে গুহা নির্মাণের কাজও। চতুর্থীতে পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন পরিচালক, লেখক, রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। কেন সেদিন দেহজীবীদের এনে পুজো করা হবে? রাধামাধব মণ্ডল বলেন, “দুর্গার নবপত্রিকার আহ্বানে, দেবীকে আহ্বানের সময়ে বেশ্যালয়ের মাটির প্রয়োজন হয়। তন্ত্রধারক বলেন, ‘সুখ প্রখিতমস্তু শ্রীবিষ্ণু প্রুনাতু’। সেইসঙ্গে ভূমি পুজো আর শক্তির পুজোতে পঞ্চ ম’কারের ব্যবহার আছে। আসলে পিছিয়ে থাকা নারী শক্তিকে জাগ্রত করতেই চণ্ডীতে এমন লিখেছেন ঋষিরা। আমিত্ব বিসর্জনের এই মা-দের পুজো করতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে মনের কালিমা দূর হয় আমাদের।” রাজ্যস্তরের বহু কৃতী মানুষ আসেন এই পুজোতে। এবার রায়বেঁশে, বহুরূপী, বোলান, ভাদু দলের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্যের অনুষ্ঠানও হবে। (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)।