বন্ধ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র, জমছে বর্জ্যের স্তূপ, দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস দশা বাসিন্দাদের, ক্ষোভ

দুর্গাপুর দর্পণ, দুর্গাপুর: আঁশটে দুর্গন্ধে ঢাকছে এলাকা। হাওয়া দিলে টেকা দায়। বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি রোগীদের সমস্যা। নগর নিগমের বর্জ্যে অতিষ্ঠ হাজার হাজার মানুষ। ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয়রা। প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ পড়ে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। বর্জ্যের পাহাড় জমেছে সেখানে। বর্ষার বৃষ্টিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে দূর দূরান্তে। পশ্চিম বর্ধমান (Paschim Bardhaman) জেলার দুর্গাপুরের শঙ্করপুরের বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র নিয়ে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। যদিও পুর নিগমের দাবি, বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য টেন্ডার হয়েছে। যন্ত্র বসানোর কাজ হয়ে গিয়েছে। দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়ে যাবে।
জানা গিয়েছে, বাম আমলে কেন্দ্রটি চালু হয়। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৩ সালে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বর্জ্যের পাহাড় জমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ২০২২ ফের সেটি চালু করা হয়। যন্ত্র বসিয়ে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করে কমানোর কাজ শুরু হয়। কিন্তু সেই কাজও প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে বর্জ্যের পাহাড় দিন দিন আরও বাড়ছে। শঙ্করপুর ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
সকাল হতেই দুর্গাপুর নগর নিগমের ৪৩ টি ওয়ার্ডের বর্জ্যবাহী গাড়ির আনাগোনা শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের জেমুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শঙ্করপুরে। গ্রাম পেরিয়ে একেবারে শেষে রয়েছে দুর্গাপুর নগর নিগমের বর্জ্য পদার্থ প্রক্রিয়াকরণ ও নিষ্কাশন কেন্দ্র। কিন্তু প্রক্রিয়াকরণ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বর্জ্য জমা হতে হতে পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। সেখানে কাক, কুকুর থেকে শুরু করে বিষাক্ত পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়ছে। কিছুটা দূরে রয়েছে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। রয়েছে সরকারি আঞ্চলিক ফরেন্সিক কার্য্যালয়।
(The Mission Hospital. দেশের সেরা চতুর্থ হাসপাতাল এখন দুর্গাপুরে। যোগাযোগ- 8687500500)
দমকা হাওয়া দিলে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে দুর্গন্ধ। সব মিলিয়ে নাজেহাল দশা জেমুয়া, মলানদিঘী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকার। দুর্গাপুর শহরের ফুলঝোড় এমন কী এমএএমসি বি-১ এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে সেই দুর্গন্ধ। শুভজিৎ রায় নামে এক বাসিন্দা বলেন, “এত দুর্গন্ধ যে বলার নয়। নোংরা বোঝাই গাড়ি যখন আমাদের এলাকা দিয়ে যায়, তখন দুর্গন্ধে কেউ কেউ প্রায় বমি করে ফেলে। আবর্জনার পাহাড় থেকে হালকা হাওয়া দিলে বা বৃষ্টি হলে যে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে, ভাবা যায় না।”
এলাকার একটি দোকানের কর্মচারী কল্যাণ মন্ডল বলেন, “প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। ব্যাপক দুর্গন্ধ ছড়ায়। টেকা যায় না।” তিনি আরও জানান, গাড়ি করে বর্জ্য নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের দোকানের সামনে দিয়ে। তখন দুর্গন্ধ আরও বাড়ে। স্থানীয়রা জানান, বর্জ্যের পাহাড় থেকে রাতে দুর্গন্ধ বেশি আসে। এছাড়া গরমে এবং বর্ষায় বৃষ্টি হলেও দুর্গন্ধ বাড়ে। এছাড়া পোকা মাকড়ের উপদ্রব তো আছেই। সব মিলিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তাঁরা।
স্থানীয়রা জানান, আশপাশে অনেক বহুতল আবাসন রয়েছে। সেই সব আবাসনের আবাসিকদেরও চরম সমস্যা হয়। বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। সমালোচনায় সরব হয়েছেন দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। তিনি বলেন, “সরকারটাই দুর্গন্ধে ভরে গিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাপুর নগর নিগমের নির্বাচন হয়নি। মানুষকে চরম সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসকমন্ডলী কী করছে? এই সরকার স্বৈরাচারী। এই সরকার কাটমানি খায়। এই সরকার উদাসীন। সেই জন্যই এই অবস্থা।”
যদিও, প্রশাসকমন্ডলীর সদস্য রাখি তিওয়ারি বলেন, “দুর্গন্ধ ছড়ায় সেটা সত্যি কথা। এলাকার মানুষের সমস্যা হয় সেটাও আমরা জানি। তবে নগরোন্নয়ন দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। একটি বেসরকারি সংস্থা দায়িত্ব পেয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ও নিষ্কাশন শুরু হবে। দেড় থেকে দু’বছরের মধ্যে এই বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ শেষ করা সম্ভব হবে। তার পরে দিনের বর্জ্য দিনেই প্রক্রিয়াকরণ করা হবে। তখন এলাকা গন্ধ মুক্ত হবে।”
(বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন )

