সনাতন গড়াই, কাঁকসা: গভীর শাল জঙ্গলের মাঝে গা ছমছমে পরিবেশে বিরাজ করেন বন কালী। কালী পুজোর পরের দিন অর্থাৎ, শুক্রবার মা বন কালীর পুজো। কাঁকসার ত্রিলোকচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের রাজকুসুম গ্রামের বাইরে ঘন শাল বন। দিনের বেলাতেই পা মারাতে ভয় লাগে। সেই ঘন শাল জঙ্গলের মাঝে গত ৫০০ বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছেন রাজকুসুমের রায় পরিবারের দেবী বন কালী। তবে এখানে কোনও প্রতিমা আনা হয় না।
এই বনকালীর প্রতিষ্ঠা কে করেছিলেন আর ঠিক কত সালে তা কারোর জানা নেই। তবে বন কালীর পুজোর সঙ্গে কাঁকসার গোপালপুরের ভট্টাচার্য্য পরিবারের দেবী বড় কালীর যোগ রয়েছে। কালীপুজোর পরের দিন রাজকুসুমের রায় পরিবারের পক্ষ থেকে পুজো যায় গোপালপুরের ভট্টাচার্য্য পরিবারে। সেই পুজো যাওয়ার পরেই বড় কালীর পুজো হয় এবং তারপরে রাজকুসুমের বনকালীর পুজো হয়।কথিত আছে, ভট্টাচার্য পরিবারের এক সদস্য রাজকুসুমের রায় পরিবারের বন কালীর পুজো করতে যেতেন। ঘন শাল জঙ্গলে বিষাক্ত সাপ এবং হিংস্র জন্তুর জন্য খুব ভয়ে ভয়ে পুজো করতে যেতেন তিনি। একদিন দেবী বন কালী ভট্টাচার্য্য পরিবারের কর্তাকে স্বপ্নাদেশ দেন, গোপালপুরে বড় কালী প্রতিষ্ঠা করে পুজো করতে। রাজকুসুমের বনকালীর পুজো কালী পুজোর পর দিন দিনের বেলায় হবে। রাজকুসুমের রায় পরিবারের বনকালীর পুজো নিয়েই বড়কালীর পুজো হবে এবং তারপরে বন কালীর পুজো শুরু হবে দিনের বেলায়। সেই নিয়ম আজও চলছে।
(BCREC & Group of institutions । পূর্ব ভারতের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 933927844, 9832131164, 9932245570, 9434250472)
আরও একটি মতের কথা শোনা যায়। মা নিজে নিজেই চলে যায় ভট্টাচার্য পরিবারে এবং স্বপ্নাদেশ দিয়ে জানান যে, তিনি সেখানেই রায় পরিবারের নৈবেদ্য দিয়ে পূজিত হবেন। সেখানে পুজো সম্পন্ন হলে জঙ্গলে মূর্তি ছাড়াই পূজিত হবেন। মায়ের স্বপ্নাদেশ দেওয়ার মত ঘটনা আজও ঘটে চলে। ঘটে অলৌকিক বা আশ্চর্যজনক ঘটনা। কয়েক বছর আগের ঘটনা। এক ব্যক্তি তার বৌদিকে খুন করার জন্য নিয়ে যায় সেখানে। মহিলা বাঁচার কোনও উপায় না দেখে মায়ের কাছে হত্যে দিয়ে পড়েন। ঠিক তখনই গ্রামে এক বিয়েবাড়িতে আসা কিছু অতিথি চলে আসেন মাকে দর্শন করতে। মহিলাটি বেঁচে যান। কিন্তু যিনি মারতে এসেছিলেন তার ছিন্ন ভিন্ন দেহ পাওয়া যায় রেল লাইনের ধারে।
প্রতি কালী পুজোর পর দিন দিনের বেলায় ঘন শাল জঙ্গলে ভিড় করেন দুর্গাপুর, আসানসোল, বাঁকুড়া, বর্ধমান, বোলপুর, সিউড়ি সহ অন্যান্য জায়গা থেকে আসা হাজার হাজার ভক্ত। ভক্তরা এখানে মানত করেন। মানত পূর্ণ হলে দেবীর উদ্দেশ্যে পুজোর দিন ছাগ বলি দেন। এছাড়া রায় পরিবারের পক্ষ থেকেও ছাগ বলি হয়। রায় পরিবারের সদস্য বিদ্যুৎ রায় বলেন, “বন কালীর কাছে মানত করলে সফল হয় মনের প্রার্থনা। সেই কারনেই দুরদুরান্ত থেকে প্রচুর ভক্ত আসেন পুজো দিতে এবং মানত করতে।” (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)।