দুর্গাপুরের অনির্বাণের আবিস্কার ভবিষ্যতে পথ দেখাবে সারা দেশের চাষীদের!

দুর্গাপুর দর্পণ, দুর্গাপুর: পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট্ট একটা স্যাটেলাইট। সেখান থেকে নিরন্তর তথ্য আসছে পৃথিবীতে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে চাষীদের হাতে প্রয়োজনীয় টিপস সহ তুলে দেওয়া হচ্ছে। বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কী না, এখন বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কত, তাপমাত্রাই বা কত- এমন নানান প্রয়োজনীয় তথ্য পাবেন চাষীরা। এর ফলে একদিকে যেমন চাষের সুবিধা হবে, তেমনই উৎপাদিত সবজি, ফল প্রভৃতি সময়ে বিক্রি করা যাবে। কারণ, প্রতিকূল আবহাওয়ায় সবজি বাড়িতে পচে যায়। আবার, এই স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য দিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করাও সম্ভব হবে।
পশ্চিম বর্ধমান (Paschim Bardhaman) জেলার দুর্গাপুরের বিধানপার্কের বাসিন্দা, ডিপিএস দুর্গাপুরের দশম শ্রেণীর ছাত্র অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এমন একটি অভিনব প্রজেক্ট তৈরি করেছে। অনির্বাণ একটি অ্যাপ গড়ে তুলেছে যাতে স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য হাতের ছোট্ট মোবাইলেই পাওয়া যায়। অনির্বাণ বলে, “সরকারি সহযোগিতায় আমার এই প্রজেক্টের রূপায়ণের মাধ্যমে দেশের লক্ষ লক্ষ চাষীকে সাহায্য করতে চাই।” অনির্বাণ জানিয়েছে, সেই অ্যাপ থেকে শুধু চাষীরাই উপকৃত হবেন না, কেউ বিপদে পড়লে এই অ্যাপের মাধ্যমে রেসকিউ টিমকে খবর দেওয়া যাবে। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কারের জন্য প্রজেক্টটি জমা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে অনির্বাণ।
অনির্বাণ বলে, “আমি SatKisan APP এবং একটি কিউবস্যাট তৈরি করেছি, যা চাষীদের লাইভ ডেটার মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেবে। এই সমস্ত তথ্য কৃষিক্ষেত্র, মহাকাশ, আবহাওয়া এবং বায়ুমণ্ডলের সাথে জড়িত যে কোনও গবেষকও ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া এই অ্যাপ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা উন্নত করতে কাজে লাগবে।” অনির্বাণ জানায়, তার প্রজেক্ট Talisha Aerospace দ্বারা স্বীকৃত এবং অনুমোদিত এবং এর সাথে সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত অংশগুলি AICT, দুর্গাপুর দ্বারা স্বীকৃত এবং অনুমোদিত। এর আগে রোভার্স, 1U কিউবস্যাট স্যাটেলাইট, রোবোটিক্স এবং অটোমেশন প্রযুক্তি সম্পর্কিত প্রকল্পের কাজ করেছে বলে জানিয়েছে অনির্বাণ।
ছোট থেকেই বিজ্ঞানে অতি উৎসাহী অনির্বাণ, বিশেষ করে সৌরজগৎ নিয়ে। তার মা ঝুম্পা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ইউকেজি থেকেই ও সৌরজগৎ নিয়ে আগ্রহী। ছোটবেলায় জন্মদিনে টেলিস্কোপ উপহার চেয়েছিল। সেই টেলিস্কোপ নিয়ে ছাদে গিয়ে চাঁদ, তারা দেখত। তারপর থেকে ওর উৎসাহ আরও বাড়তে থাকে। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় রোবোটিক কার ও কুলার বানিয়েছিল। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় ওর পা ভেঙে যায়। তখন ঘরে বসে অনির্বাণ স্যাটেলাইট কমিউনেকেশন নিয়ে রিসার্চ করে। তা Talisha Aerospace অনুমোদন করেছে। এখন একটি অ্যাপ ডেভলপ করছে যেটা চাষীদের এবং বিপর্যয়ের সময় রেসকিউ অপারেশনে সাহায্য করবে।”
তালিশা গ্রুপ অফ কোম্পানিজ এর চেয়ারম্যান আবীর ঘোষ বলেন, “স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন নিয়ে অনির্বাণের কাজ আমাদের দেশের চাষীদের সাহায্য করবে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় কাজে লাগবে। ওর প্রজেক্ট বাকি ছাত্র ছাত্রীদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।” এআইসিটি প্রাইভেট লিমি়টেড এর প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণ কুমার যাদব বলেন, “স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন এর পাশাপাশি এআই নিয়েও কাজ করা হয়েছে ওই প্রজেক্টে। আমরা সব সময় অনির্বাণের পাশে আছি। ও দারুণ কাজ করছে।” (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)

