জঙ্গলমহলের গভীরে শতাব্দী প্রাচীন দুর্গাপুজোয় নেই কোনও ব্রাহ্মণ পুরোহিত

জঙ্গলমহলে শতবর্ষের আদিবাসী দুর্গাপুজো
দুর্গাপুর দর্পণ, দুর্গাপুর: পশ্চিম বর্ধমানের (Paschim Bardhaman) দুর্গাপুরের শহরতলিতে বড় বাজেটের বারোয়ারি দুর্গাপুজো এবং বনেদি বাড়ির ঐতিহ্যবাহী পুজোর আড়ম্বর সবারই জানা। তবে শহরের কোলাহল থেকে দূরে, কাঁকসা ব্লকের জঙ্গলমহলের গভীরে আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক অনন্য দুর্গাপুজো আজও অনেকের অজানা। জামডোবার কাছে ফরেস্ট ডাঙা নামের ছোট্ট এক আদিবাসী গ্রামে প্রায় শতবর্ষ ধরে চলছে এই বিশেষ দুর্গাপুজো। এখানে কোনও ব্রাহ্মণ পুরোহিত নেই — বংশ পরম্পরায় হাঁসদা পরিবারই দেবী দুর্গার আরাধনা করে আসছেন। বর্তমানে স্বপন হাঁসদা পুজো পরিচালনা করেন। পুজোর মন্ত্রপাঠ হয় সাঁওতালি ভাষায়। সঙ্গে অবশ্য সামান্য বাংলাও ব্যবহৃত হয়।
স্বপন হাঁসদার পরিবারে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন তাঁর প্রপিতামহ রসিক হাঁসদা। কথিত আছে, একসময় শিকারের সময় রসিকবাবুর পায়ে বড় কাঁটা ঢুকে যায়। ব্যথায় কাতর অবস্থায় তিনি জঙ্গলের একটি দুর্গামন্দিরে আশ্রয় নেন। দেবীর কাছে আরোগ্যের প্রার্থনা করার পর আশ্চর্যজনকভাবে তাঁর ব্যথা সেরে যায়। সেই থেকে দেবী দুর্গার প্রতি তাঁর অগাধ ভক্তি জন্ম নেয়। অর্থাভাবে তিনি প্রতিমা আনতে পারেননি, তাই বাড়িতে একটি ‘মাটির ঘট’ বসিয়ে ঘটপুজো শুরু করেন। চার দিন ধরে সেই ঘটপুজোই ছিল তাঁদের দুর্গাপুজোর আয়োজন।
(Dvita Eye Care। কলকাতার বাইরে সেরা চোখের হাসপাতাল। যোগাযোগ- 0343-6661111)
পরে তাঁর বংশধর বাবুলাল হাঁসদাও একই ভাবে পুজো চালিয়ে যান। প্রায় এক দশক আগে স্বপন হাঁসদা ঘটপুজোর পরিবর্তে প্রতিমা পুজো শুরু করেন। এরপর থেকেই এই পারিবারিক দুর্গাপুজো সর্বজনীন আকার পায়। প্রতি বছর দুর্গাপুজোর চারদিন ধরে ফরেস্ট ডাঙা গ্রাম এবং আশেপাশের মানুষ একত্রিত হন। বিশেষ আকর্ষণ, নবমীর দিন আয়োজিত মহোৎসব। দিনমজুর স্বপন হাঁসদার একার পক্ষে পুজোর খরচ বহন করা সম্ভব নয়। তাই গ্রামের মানুষ এবং পাশের জামডোবা এলাকার বাসিন্দারা মিলে আর্থিক সাহায্য করেন। শহরের বড় বাজেটের আলোড়নের বাইরে, জঙ্গলমহলের এই দুর্গাপুজো আদিবাসী সংস্কৃতি, ভক্তি আর ঐতিহ্যের এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত। (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)
