রোমাঞ্চকর ভুতের গল্প: ‘ভুতের বাড়ি’

ভুতের বাড়ি
মানু গৌতম
আমাদের পাড়ার হাবু কাকা বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মেছিল। তার ঠাকুরদা সরযূ বাঁড়ুজ্যে ইংরেজদের চাটুকারিতা করে বেশ উপার্জন করেছিল। পুকুর ভরা মাছ, গোলা ভরা ধান, মন্দির, দরদালান বেশ ছিল সব। কিন্তু, হাবু কাকা ছিল ডাকা বুকো, পড়ায় মন ছিল না। অপর দুই ভাই পড়াশুনায় ভাল ছিল তাই একজন স্কুল মাস্টার আর এক জন সরকারি কেরানি হল। হাবল কাকার আর কিছু হল না। ফলে বড় ভাইয়ের বিয়ে হলেও মেজভাই হাবল কাকার বিয়ে দেওয়ার কোনও ইচ্ছা তার বাবার ছিল না। তখন হাবল কাকা করল কী, হঠাৎ একদিন একটা ত্রিশুল নিয়ে সাধু হয়ে গেল!
পাড়ার লোকে তখন হাবলের বাবাকে বলল, হাবলের বিয়ে দিয়ে দাও। হাবলের বিয়ে হল বেশ সুন্দরী এক মেয়ের সাথে। কিছুদিনের মধ্যে হাবলের দাদুর মৃত্যু হল। বাইরের আয় শূন্য হয়ে গেল। হাবলের বাবারা তিন ভাই। তারা পৃথক হয়ে গেল। হাবলের বাবার চারটি মেয়ের বিয়ে দিয়ে ছেলেদের ভাগে পড়ল দুই থেকে আড়াই বিঘা সম্পত্তি। এতে তো আর সংসার চলে না। হাবল তো কিছু হাতের কাজ ও জানে না। ফলে সংসারে অভাব নেমে এল। হাবল কাকার দুই সন্তান নিয়ে পরিবারে মোট চার জন। দাদা, ভাই মিলে হাবল কাকাকে পৃথক করে দিল।
(BCREC & Group of institutions । পূর্ব ভারতের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 933927844, 9832131164, 9932245570, 9434250472)
ভয়ানক অভাব শুরু হল সংসারে। অযত্নে অনাহারে হাবল কাকিমার টিবি হল, সেই রোগেই কিছুদিন পরে গত হলেন কাকিমা। এদিকে হাবল কাকারও একই রোগ দেখা দিল। অপুষ্টি ও অনাহারে হাবল কাকাও মৃত্যুপথ যাত্রী হলেন। টিবি সংক্রামক রোগ বলে হাবল কাকার দাদা, ভাই সকলে তাকে বয়কট করল। হাবল কাকার দুটি নাবালক পুত্র। ছোটকে কাকা নিয়ে গেল। কিন্তু বড়ছেলে মাধবকে থাকতে হল বাবার কাছে। একটি মাত্র মাটির ঘর। তাতে সংক্রমক রোগী। পাশের বাড়ির অতনুর মা মাধবকে বললো, শোন মাধব মুখে কাপড় বেঁধে বাবার গু, মুত ঘোচাবি। তার পর সোডা দিয়ে কাপর কেচে, নিজে সাবান দিয়ে চান করে চলে আসবি আমাদের বাড়ি। আমরা তো খুব গরীব। চারটা ছেলে-মেয়েকে খেতে দিতে হিমসিম খাই। তবু বলছি তাদের ভাগ কেটেই তোকে দুটি খেতে দেব। আর রাত্রে আমার ছেলে রমনীর কাছে শুবি।
এ ভাবেই চলতে লাগল। আস্তে আস্তে হাবু কাকাও নিস্তেজ হতে লাগল। শেষে অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তির দিন গভীর রাত্রে হাবল কাকার আর্তনাদ শোনা গেল, অতনুর মা মাধবকে এসে বুকে জড়িয়ে ধরল। এই দেখে অতনু সহ পাঁচ ভাইবোন ভয় পেল ও বিস্মৃত হল। অতনুদের বাড়িটা যেহেতু হাবল কাকার ঘরের পাশেই, তাই সব শোনা যাচ্ছিল। হাবল কাকা ডাকছে, মাআআআধঅঅঅব ,মাআআআআআধঅঅঅব, মাআআআআধঅঅঅব। তিন বার ডাকল, তারপরই শুরু করল, এসেছো তুমি, তুমি এসেছো, আমায় নিতে এসেছো, কেন এতও দেরী করলেএএএএ, আমার এত কষ্ট তুমি দেখতে পাচ্ছিলে না, আর দেরী করো না, এবার নিয়ে চলো, আমি আর পারছি না যে, আমায় নিয়ে চলো। এভাবে কথা আস্তে হতে হতে সব শুনশান হয়ে গেল এক সময়।
(Dvita Eye Care। কলকাতার বাইরে সেরা চোখের হাসপাতাল। যোগাযোগ- 0343-6661111)
নাটক জমে উঠল পরদিন। হাবল কাকার বড় ভাই কখনও উঁকি মেরেও দেখতো না। তারই বড়ো মেয়ে সকালে অতনুদের বাড়িতে এসে অতনুর মাকে বলছে, কাকিমা মাধবকে পাঠাও, ও একটু মুড়ি খাবে। অতনুর মা বলল, তুই বাড়ি যা, আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি। সে বাড়ি গেল। তার পর অতনুর মা ডাকল মাধবকে, বলল নে একটু চা খা। তার পর বলল, শোন তোর বাবা মনে হয় মারা গেছে। তুই এত সেবা যত্ন করলি। আর একটা দিন উপবাস করলেই তোর বাবার প্রতি কর্তব্য শেষ। তাই জেঠা মুড়ি খেতে বললেও তুই খাবি না। আগে বাবাকে দেখবি, তার পর যা করিস করবি। বেঁচে থাকলে ওরা তোকে ডাকতো না।
সেই কথা শুনে মাধব প্রথমে বাবার কাছে গেল। সাথে অতনু ও রমনী। দেখল, মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে হাবল কাকার। শরীরের গর্দানটা দরজার তলগোড়ায়, চৌকাঠ পার হয়ে বাইরের দিকে মাথাটা চিৎ হয়ে রয়েছে, হাঁ করে পড়ে আছে, পায়ের দিকটা ঘরের মেঝেয় পড়ে, গোটা শরীর বিষ্ঠায় মাখামাখি। এর পর আবার নাটক শুরু। সৎকাজ করার পয়সা নেই। আর কেউ মৃতদেহ ছুঁচ্ছে না। এমন সময় এন্ট্রি নিল সুভাষ মাষ্টার। পাড়ার মধু, সুবল, ভেতো, ধুলোদের ডাকল, আয় ভাই একে সৎকার করি। মধু কাকা বলল, মাস্টার এই গন্ধ খালি মুখে সহ্য হবে না, পাঁচ টাকা দাও, মদ আনি, খাওয়ার পর সব করব। সুভাষ মাস্টার পাঁচ টাকা দিলে ওরা মদ খেয়ে এসে মুখে কাপড় বেঁধে মৃতদেহ বের করল। টাকা নেই। তাই সিদ্ধান্ত হল গঙ্গাযাত্রা হবে না, খড়ের মাঠে পোড়ানো হবে।
(The Mission Hospital. দেশের সেরা চতুর্থ হাসপাতাল এখন দুর্গাপুরে। যোগাযোগ- 8687500500)
মধু কাকা চেয়ে চিন্তে ১০টাকা জোগাড় করে ক বোতল মদ কিনল। কিছু মুড়ি আর চানাচুড় নিয়ে চলে গেল। অতনুর দাদা রমনীকে যেতে হল মুড়ি, কেরোসিন তেল এসব নিয়ে যাবার জন্য। পুড়িয়ে এসে রাত্রে অতনুর দাদা রমনী স্বপ্নে দেখল, কী ভাবে মৃতদেহ ডাকছে, অমনি বুবুবুবু করে চিৎকার আরম্ভ করে দিল। সেই চিৎকার অন্যান্য ভাইবোনকে জারিত করল। তখন সবাই মিলে বুবু বুবু করে চিৎকার করতে লাগল। পাশের ধানুদা এসে সকলকে নিয়ন্ত্রণ করে বাইরে বের করে ঘুরিয়ে দেখালো। এর পর তো কটা দিন ভালোই কাটল। কিন্তু হাবল কাকার যে ঘরে মৃত্যু হয়েছিল, সেই ঘরে কেউ গেল না তাই পরিস্কার ও হল না। সৎকার্য হয়ে যাওয়ার পর মাধবকে ওর কাকা নিয়ে গিয়ে ব্যারাকপুরে মিষ্টির দোকানে লাগিয়ে দিল। আর, ওই বাঁড়ুজ্যে বাড়িও ফাঁকা হয়ে গেল। কে যে কোথায় গেল কে জানে, কেবল বিশাল চত্তরে এক কোণে রইল হাবল কাকার বড় দাদার পরিবার।
এদিকে প্রায়ই গভীর রাতে পাড়ার লোকে দেখতে লাগল। একজন মহিলা লাল পাড়ের কাপড় পরে সন্ধ্যা দেওয়ার মতো হাতে প্রদীপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বলছে, মাধব কোথা রে বাবা, কোথায় তুই, অমনি একটা বিকট শব্দ করে কে বলতো, মাধব ফিরে আয়। আর প্রদীপ নিভে যেত। তার পর সব শুনশান হয়ে যেত। সকলে পরামর্শ দিল, মাধব যেন এখানে আর না আসে। তার পর মাধবের ছোট ভাইকে নিয়ে এসে ওই ভগ্ন ঘরে একটা হোম করা হল। আর কুলোটা উল্টো করে তাতে ছাই দিয়ে দক্ষিণ মুখে দান করা হল। এর বহুকাল বাদে মাধব এল পিতৃভূমিতে। আর সেই দিন রাত্রেই শোনা গেল, ওই ঘর থেকে একটা অদ্ভূত গোঁ গোঁয়ানি শব্দ। সকলে মাধবকে চলে যেতে বলল। মাধব চলেও গেল। কিন্তু কাটোয়াতে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তাঁর মৃত্যু হল। আর সব শান্ত হয়ে গেল!