কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা: দু’চাকায় ৪২৪৯ কিমি পাড়ি দিল অণ্ডালের অরিত্র
মাউন্টেন বাইকে ১৫ দিনে ৪২৪৯ কিমি
দুর্গাপুর দর্পণ, দুর্গাপুর: স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা সর্দার বল্লভভাই পটেলের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রের ফিট ইন্ডিয়া প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত হল কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা সাইকেল র্যালি—যা ভারতের সবচেয়ে বড় পরিবেশবান্ধব কর্মসূচিগুলির মধ্যে অন্যতম। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট দেড়শো জন সাইকেল আরোহী যোগ দেন এই ঐতিহাসিক রাইডে। সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিল পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমানের (Paschim Bardhaman) অণ্ডালের সাউথ বাজারের ছেলে অরিত্র সরকার, যে এই বয়সেই প্রমাণ করে দিল—সাইকেল শুধু পরিবহণের মাধ্যম নয়, এটা স্বাধীনতার স্বাদ, শারীরিক সক্ষমতা আর পরিবেশরক্ষার প্রতি এক শক্তিশালী বার্তা।
দুর্গাপুরের এক বেসরকারি কলেজে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমার তৃতীয় বর্ষে পড়ছে ১৯ বছরের অরিত্র। পড়াশোনার ফাঁকে সে নিয়মিত সাইকেল চালায়। সাইকেল চালিয়ে কলেজে যাতায়াত করে সে। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন—সাইকেলেই দেশ ঘোরা, বিশ্ব দেখা। ইন্টারনেটে ‘রাইড ফর ইউনিটি’-র খবর পেয়ে আবেদন করে, আর যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিতও হয়। পশ্চিমবঙ্গ থেকে মাত্র দু’জন সুযোগ পেয়েছিল, অরিত্র তাদের একজন—যা নিয়ে গর্বিত তার পরিবার ও এলাকার বাসিন্দারা। অরিত্রর বাবা অপূর্ব সরকার, যিনি একটি বেসরকারি কারখানায় কর্মরত, ছেলেকে সবসময়ই উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “দূষণে জর্জরিত পৃথিবীতে সাইকেল আবার মানুষের প্রধান পরিবহণ হোক—এই আমাদের স্বপ্ন। অরিত্রর এই যাত্রা সেই সচেতনতারই প্রতীক।”

৪২৪৯ কিমির রোমাঞ্চকর যাত্রা
৩১ অক্টোবর সকল যাত্রীরা শ্রীনগরে পৌঁছান। পরদিন ভোরে শুরু হয় প্রকৃত অভিযান। শ্রীনগর থেকে জম্মু, তারপর পঞ্জাবের দোহারা, হরিয়ানা হয়ে দিল্লি—এভাবেই এগোতে থাকে সাইকেলযাত্রা। এরপর গুজরাটের স্ট্যাচু অফ ইউনিটি। সেখানে, সর্দার বল্লভভাই পটেলের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। এরপর ফের যাত্রা শুরু। ১৫ দিনের দিন কন্যাকুমারিকায় পৌঁছয় দলটি। প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার পথ। ভোর ৬টায় যাত্রা শুরু, রাতে বিরতি। মাঝে জলখাবার ও দুপুরের খাওয়ার জন্য স্বল্পসময় থাকত মাত্র।
অরিত্র জানিয়েছে, সে ব্যবহার করেছিল একটি মাউন্টেন ট্রেইল বাইক—যা সাধারণ সাইকেলের তুলনায় অনেক ভারী, টায়ার মোটা এবং ব্যাগসহ মোট ওজন প্রায় ১৬ কেজি। শারীরিকভাবে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হলেও নিজের জেদ, স্বপ্ন আর অনুরাগেই এই কঠিন পথ অতিক্রম করেছে সে। তার কথায়, “এখনও রোজগার করি না, তাই দেশভ্রমণের ইচ্ছে থাকলেও সুযোগ হয় না। ফিট ইন্ডিয়ার এই রাইডটা আমার জীবনের প্রথম বড় অভিজ্ঞতা। ভবিষ্যতে পুরো দেশ—তারপর পৃথিবী ঘুরতে চাই।”
(BCREC & Group of institutions । পূর্ব ভারতের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 933927844, 9832131164, 9932245570, 9434250472)
সাইকেলের প্রয়োজনীয়তা: সময়ের দাবি
অরিত্রর এই যাত্রা কেবল একটি দুঃসাহসিক অভিযান নয়—এটা আবার মনে করিয়ে দিল যে সাইকেল কেবল যাতায়াতের মাধ্যম নয়, পরিবেশ বাঁচানোর এক কার্যকর হাতিয়ার। সাইকেলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হল—
-
দূষণহীন পরিবহণ—সাইকেল কোনও ধোঁয়া বা ক্ষতিকর গ্যাস সৃষ্টি করে না।
-
স্বল্প খরচে চলাচল—জ্বালানি তেল বা গ্যাসের দাম বাড়লেও সাইকেলের খরচ অপরিবর্তিত।
-
শরীরচর্চার মাধ্যম—নিয়মিত সাইকেল চালালে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং স্ট্যামিনা বাড়ে।
-
যান্ত্রিক জটিলতা কম—সাইকেল ভেঙে গেলে সহজেই ঠিক করা যায়, রক্ষণাবেক্ষণ খরচও খুব কম।
-
সংকীর্ণ রাস্তায় সহজ চলাচল—যানজট এড়াতে সাইকেলের তুলনা নেই।
-
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি—খোলা হাওয়ায় সাইকেল চালানো মনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অণ্ডালের সাইকেলপ্রেমী প্রসেনজিৎ বোস বলেন, “সাইকেল চালালে শরীর সুস্থ থাকে, দূষণ ছড়ায় না। সাইকেলে স্বাধীনভাবে নানা জায়গায় যাওয়া যায়। অরিত্র যে সাহস নিয়ে সাইকেলে দেশভ্রমণে নেমেছিল, তা আজকের তরুণদের কাছে এক বড় অনুপ্রেরণা।” স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই যাত্রা প্রমাণ করে দিল—সাইকেলের গুরুত্ব আজও অমলিন, বরং বর্তমান পৃথিবীতে আরও বেশি প্রয়োজনীয়। অরিত্রর পথ ধরে আরও তরুণ যদি সাইকেলকে সঙ্গী করে নেয়, তবে সুস্থ-সুন্দর পরিবেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে পৃথিবী। (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)


