চার প্রজন্ম ধরে চলা ‘সরার লক্ষ্মী পুজো’ আজও অটুট দুর্গাপুরের সাহা পরিবারে

দুর্গাপুরের ঐতিহ্যবাহী সরার পুজো
সুজয় ভট্টাচার্য্য, দুর্গাপুর দর্পণ, দুর্গাপুর: বাড়িতে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো মূলত পূর্ববাংলায় যাঁদের শিকড় রয়েছে, তাঁরাই করে থাকেন। ওপার বাংলায় ধনলক্ষ্মীর আরাধনা হত বিভিন্ন ভাবে। মূর্তির প্রচলন ছিল না। প্রতীকে পুজো হত। অনেকেই পরিবারিক নিয়ম মেনে সরা পটে লক্ষ্মী পুজো করে থাকেন সেখানে। মাটির সরার উপর নানা রঙ দিয়ে সপরিবারে দুর্গাকে আঁকা হয়। সেখানেই থাকে মা লক্ষ্মীর ছবি।
‘সরা’ বা ‘পট’-এর লক্ষ্মী পুজো মূলত কৃষিনির্ভর সমাজের এক ঐতিহ্যবাহী রীতি। দেবী লক্ষ্মীকে সম্পদ, শস্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে মানা হয়। তাই এই পুজোর মূল উদ্দেশ্য ভালো ফলন ও শস্যের প্রাচুর্য কামনা করা। আজও পুজোর সরায় অঙ্কিত হয় দেবী লক্ষ্মী, জয়া-বিজয়া এবং অন্যান্য দেবদেবীর মনোরম প্রতিমূর্তি— যা শিল্পকলা ও ধর্মবিশ্বাসের এক অনন্য মেলবন্ধন।
এই খবরের ভিডিও দেখতে হলে ইউটিউবে যান
(BCREC & Group of institutions । পূর্ব ভারতের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 933927844, 9832131164, 9932245570, 9434250472)
পূর্ববঙ্গের মাটিতে জন্ম নেওয়া এই প্রথা সময়ের স্রোত পেরিয়ে আজ পশ্চিমবঙ্গের বহু ঘরে এক গভীর সংস্কার ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে। পশ্চিম বর্ধমানের (Paschim Bardhaman) দুর্গাপুরের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুকান্তপল্লীর সাহা বাড়িতেও সেই ধারা আজও বহমান। সাহা পরিবারের সদস্যা পাপিয়া সাহা জানালেন, “এই পুজো আমার শাশুড়ির শাশুড়ি শুরু করেন বাংলাদেশে। সেই থেকেই এই পুজো হয়ে আসছে। এই পুজো আমার বাপের বাড়িতেও হয়, মামা শ্বশুরের বাড়িতেও হয়। সেই একই নিয়মে আমরাও পুজো করে আসছি।”
তিনি আরও জানান, তাঁদের পুজোর বিশেষত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের পুজোয় কলা বউ বা আখ বউ নয়, বরং থাকে নারকেল বউ, যিনি পটের পিছনে অবস্থান করেন। সরায় দেবী দুর্গার চিত্র এঁকে পুজো করা হয়। আমার বিয়ের পর ২৭ বছর ধরে আমি একই রীতি মেনে নিষ্ঠা ও ভক্তির সঙ্গে পুজো করে আসছি।” এভাবেই চার প্রজন্ম ধরে সাহা পরিবার অটুট রেখে চলেছে সংস্কার এবং বিশ্বাসের উত্তরাধিকার। আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক কিছু বদলে গেলেও, সাহা বাড়ির ‘সরার লক্ষ্মী পুজো’ আজও যেন স্মরণ করিয়ে দেয়— ঐতিহ্য মানে শুধু অতীত নয়, ভবিষ্যতের শিকড়-ও। (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন )
