হেলমেট পরা অবস্থায় যদি বাইরের কেউ বাড়িতে ঢোকে তাহলে কেন চিৎকার করল না বাড়ির দু’দুটি কুকুর? এই প্রশ্নের উত্তরেই লুকিয়ে ছিল সূত্র!
——————————————-
দুর্গাপুর দর্পণ, কাঁকসা, ৩ জানুয়ারি ২০২৪: বাড়িতে ঢুকে ভর দুপুরে তিনজনকে খুন করল দুষ্কৃতী। অথচ বাড়িতে থাকা দুটি পোষ্য বিদেশি কুকুর কেন চিৎকার করল না? গত বছরের ১০ নভেম্বর পশ্চিম বর্ধমান (Paschim Bardhaman) জেলার দুর্গাপুরের কাঁকসার সারদাপল্লির এই খুনের তদন্তে নেমে এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিলেন তদন্তকারীরা। তাহলে কি যে এসেছিল তাকে চেনে এই দুই সারমেয়? এই প্রশ্নের উত্তরেই লুকিয়ে ছিল সূত্র!
খুনের ঘটনার কয়েকদিন আগে সারদাপল্লির ধনঞ্জয় বিশ্বকর্মা সস্ত্রীক আসামে গিয়েছিলেন তাঁর বড় মেয়ের বাড়িতে। বাড়িতে ছিল ছোট মেয়ে সিমরন, ধনঞ্জয়ের শাশুড়ি সীতাদেবী এবং শ্যালকের ছেলে সনু বিশ্বকর্মা। তাঁদের শ্বাস রোধ করে খুন করা হয়। ধনঞ্জয়ের ভাই রাজু দাবি করেন, তিনি বিশেষ কাজে ইলামবাজারে গিয়েছিলেন। স্ত্রী রিঙ্কুর মুখে শোনেন, হেলমেট পরে বাইক নিয়ে কেউ এসেছিল ধনঞ্জয়ের বাড়িতে। আবার হেলমেট পরেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাইক নিয়ে চলে যায়। এরপরেই রিঙ্কু গিয়ে দেখতে পান সিমরন এবং সীতাদেবীর দেহ পড়ে আছে দুটি বিছানায়। সোনুর রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে বাড়ির উঠোনে।
মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা নমুনা সংগ্রহ করেন। তদন্ত শুরু করে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত বুধবার রিঙ্কুকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রিঙ্কু সম্পর্কে সিমরনের কাকিমা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রিঙ্কুর একজনের সঙ্গে প্রণয় ঘটিত সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের কথা সিমরন জানতে পেরে যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, কাকিমার মোবাইলে বিশেষ ‘অ্যাপ’ ঢুকিয়ে দিয়ে কাকিমার গতিবিধি জানতে থাকে সিমরন। সেই কথা পরে জানতে পেরে যায় রিঙ্কু।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, সিমরন কাকিমার কুকীর্তির অনেক ছবি পেয়ে যায়। সেই ছবি পরিবারের সকলের কাছে ফাঁসও করে দেয়। তারপর থেকেই কাকিমার ক্ষোভ বাড়তে থাকে সিমরনের উপর। শেষ পর্যন্ত সিমরনকে চুপ করিয়ে দিতে খুন করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত বাকি দু’জনকেও সাক্ষী লোপাটের জন্য খুন করা হয় বলে পুলিশ মনে করছে। বুধবার ধৃতকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পাঠায় পুলিশ। বিচারক তাকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
সিমরনের দুটি মোবাইল ফোন খুনি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় সন্দেহ আরও তীব্র হয় পুলিশের। সেই মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্রাক করা ও একাধিক জনকে ধারাবাহিক জেরা, এমনকি খুনির হদিস পেতে ঝাড়খণ্ডেও হানা দেয় পুলিশ। ধীরে ধীরে পুলিশ নিশ্চিত হয়, খুনের সঙ্গে কাকিমা তথা রিঙ্কুর যোগ রয়েছে। এরপর তাকে জেরা করে খুনের বিষয়ে নিশ্চিত হয় পুলিশ। খুনের ঘটনার মাস ছয়েক আগে সিমরন কাকিমার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের একাধিক আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ফাঁস করে দেয় পরিবারের বাকিদের কাছে। কাকিমার ঘরে দিন রাত বাইরের পুরুষ ঢুকছে, তার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করেছিল সিমরন।
(বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)।