দুর্গাপুর দর্পণ, দুর্গাপুর, ১৫ জুলাই ২০২৩: তলপেটের টিউমার (tumor in lower abdomen) বাড়তে বাড়তে এমন হয়ে গিয়েছিল, যে পশ্চিম বর্ধমানের (Paschim Bardhaman) দুর্গাপুরের জুলেখা ইয়াসমিন আর নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না। একদিকে ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট, সঙ্গে বুকে প্রবল ব্যথা। শুয়ে পাশ ফেরার ক্ষমতা ছিল না, এত ব্যথা। রক্তচাপ নেমে হয়েছিল ৬০/৪০। ওজন হয়েছিল মাত্র ৩০ কেজি। কিন্তু পেটে তখন ব্যথা ছিল না। কিন্তু জুলেখার মনে হচ্ছিল, পেটে খুব ভারি কিছু চাপানো আছে।
গত ১৬ মে দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে (Mission Hospital Durgapur) যখন ডিএসপি হাসপাতাল থেকে জরুরী ভিত্তিতে রেফার করা হয়, তখন জুলেখা জানেন না তিনি আর আদৌ বাঁচবেন কি না। নিদারুণ কষ্টে তিনি জেরবার। মিশন হাসপাতালের কনসালটেন্ট গাইনি, অনকোলজিস্ট ডাঃ অনির্বাণ দাশগুপ্ত জানান, জুলেখার পেটে বিশাল আকারের টিউমার ছিল যা তলপেট থেকে উঠে এসেছিল। যে কারণে পেটে ও ফুসফুসের চারপাশে জল জমেছিল। তিনি বলেন, ‘‘ডিএসপি হাসপাতাল খুব দ্রুত পরিস্থিতি বুঝে মিশন হাসপাতালে রেফার করে। দেরি হলে বিপদ হতে পারত।’’
দেখুন সেই ভিডিও
জুলেখার দিদি ফরিদা জালাল (ইয়াসমিন) ডিএসপি হাসপাতালের নার্সিং অ্যাসিস্ট্যান্ট। দিদি জুলেখা তাই ডিএসপি হাসপাতালেই এসেছিলেন চিকিৎসা করাতে। ফরিদা বলেন, ‘‘তখন দিদির ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। রিপোর্টে দেখি, ডান ফুসফুস পুরো সাদা তখন। চরম আশঙ্কাজনক অবস্থা।’’ ডাঃ অনির্বাণ জানান, মিশন হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে যখন আনা হয় তখন প্রথমে হার্নিয়া মনে করা হয়েছিল। কিন্তু জায়গাটা খুব শক্ত ছিল। ইমার্জেন্সিতেই এক লিটারের মতো জল বের করা হয়। তাতে অনেকখানি রিলিফ বোধ করেন জুলেখা।
সেই সময় জুলেখার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ছিল মাত্র সাড়ে ৫। সব রকম পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হয়। এক্স রে ও সিটি স্ক্যান করা হয়। দেখা যায় টিউমার প্রায় ২৬ সেমি লম্বা। দশ মাসের গর্ভবতী মহিলার ইউটেরাসের থেকেও বড়। যা ডায়াফ্রামের উপর এমন চাপ দিচ্ছে যে শ্বাস নিতে পারছেন না জুলেখা। বের করা জলে ম্যালিগনেন্ট সেল আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য জলের নমুনা পাঠানো হয় ল্যাবে। সি ওয়ান ১২৫ করা হয়। ফল আসে ৪৮৮। ওঁর বয়েস ৪৬। ফলে ঝুঁকি ছিল। ল্যাবের রিপোর্ট এলে দেখা যায়, জলে ক্যান্সার সেল নেই। সঙ্গে সঙ্গে অপারেশনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।
ডাঃ অনির্বাণ জানান, আমরা এমন প্রস্তুতি নিয়েই নামি যে সারকোমা ও ইউটেরাইন টিউমার হতে পারে। রেডিওলোজিস্টরা জানান, এই টিউমার উদ্ভুত হয়েছে ইউটেরাস থেকে। তাই গোটাটাকে বের করা দরকার। এমআইসিইউতে ভর্তি করা হয় জুলেখাকে। প্রোটিন লেভেল বাড়ানো হয়। অ্যালবুমিন দেওয়া হয়। রক্ত দেওয়া হয়। এভাবেই তাঁকে অপারেশনের জন্য় তৈরি করা হয়। এরপর অপারেশন করে বিশাল টিউমার মাস বের করা হয়। এরপর বায়োপসির জন্য পাঠানো হয়।
অপারেশনের পরে জুলেখাকে এসআইসিইউতে পাঠানো হয়। জুলেখা বলেন, এসইউসিআইয়ে ডাক্তার, সিস্টার, টেকনিশিয়ান সবাই খুব সাপোর্ট করেছেন। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে থাকি। দু’দিন পরেই হাঁটতে পারি। ডাঃ অনির্বাণ বলেন, ‘‘যেহেতু অপারেশনের আগে ব্লাড, প্রোটিন প্রভৃতি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল তাই জুলেখার দ্রুত রিকভারি হয়। তাছাড়া ফিজিওথেরাপিরও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অপারেশনের সময় অ্যানাস্থেটিস্টদেরও বড় ভূমিকা ছিল। পুরোটাই একটা ‘টিম এফোর্ট’।’’
জুলেখা বলেন, ‘‘আগে কী কষ্ট যে পাচ্ছিলাম সেটা শুধু আমিই জানি। কিন্তু অপারেশনের পরে কোনও ব্যাথাই অনুভব করিনি। জীবনে প্রথম বারের মতো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। দারুণ অভিজ্ঞতা।’’ ডাঃ অনির্বাণ বলেন, ‘‘যাঁদের পেলভিক কন্ডিশন জটিল, এন্ডোমেট্রিও সিস্ট, ওভারিয়ান টিউমার বা ইউটেরিয়ান টিউমার রয়েছে তাঁরা যেন দ্রুত চিকিৎসার জন্য আসেন। যাতে ভবিষ্যতের বড় বিপদ সহজেই এড়ানো যায়।’’ (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)।