দুর্গাপুর: আদিবাসীদের জমি দখল করে পেট্রল পাম্পের পরিকল্পনা! আউশগ্রামের তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। জমি দখল করে জাল নথি দেখিয়ে ওই জমিতে থাকা জঙ্গল সাফ করার অভিযোগও উঠেছে। তৃণমূলের আউশগ্রাম ২ ব্লকের সভাপতি লালন শেখের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ঘিরে উত্তাল কাঁকসার রঘুনাথপুর এলাকা। দ্রুত ব্যবস্থা না হলে আদিবাসীদের সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পরগানা হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
সত্তরের দশকে নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে যাওয়া আদিবাসীদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে কাঁকসার রঘুনাথপুর ময়দানে জঙ্গলমহল উৎসবের আয়োজন করা হয়। ১৯৭৮ সালে অবিভক্ত বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার অমিয় কুমার সামন্ত ওই ময়দানে একটি ভবনের শিলান্যাস করেন। পরে ওই ভবনের উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাজ্যপাল ত্রিভুবন নারায়ণ সিং। প্রতি বছর ওই মাঠে জঙ্গলমহল উৎসব, হুল উৎসব, পুলিশের ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ময়দানে এসে উৎসবের সূচনা করে গিয়েছেন। ময়দানের পাশেই আদিবাসীদের একলব্য আবাসিক স্কুল।
(The Mission Hospital. দেশের সেরা চতুর্থ হাসপাতাল এখন দুর্গাপুরে। যোগাযোগ- 8687500500)
ময়দানের প্রায় ১৯ বিঘা জমি আউশগ্রাম ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শেখ আব্দুল লালন নিজের পরিবারের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। বাংলার জমির পোর্টালে জি এল নম্বর ০৩৯ মৌজা রঘুনাথপুর থানা কাঁকসা, ১১৭৬ এই দাগ নম্বরে, খতিয়ান নাম্বার ১৫৮১ লালনের ছেলে আফজল রহমানের নামে ০.১৬৯৬ অংশ রেকর্ড করা হয়েছে। খতিয়ান নম্বর ১৫৮৪ তাঁর পরিবারের আরেক সদস্য মহম্মদ হাজেরা খাতুনের নামে ০.১৬৯৬ পরিমাণ অংশ রেকর্ড হয়েছে। তার পরিবারের আরেক সদস্য শেখ মহম্মদ আরিফ ১৫৮৬ খতিয়ানেও বেশ কিছু অংশ রেকর্ড হয়েছে। নিজের পরিবারের নামে ওই জমি রেকর্ড হতেই জঙ্গল কেটে সাফ করতে শুরু করেছেন লালন, এমন অভিযোগ উঠছে।
বিষয়টি জানাজানি হতেই আদিবাসী সংগঠনগুলি জেলা শাসকের দফতর থেকে প্রশাসনের সর্বস্তরে অভিযোগ জানায়। অভিযোগ পাওয়ার পরই কাঁকসার ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিক মঞ্জু কাঞ্জিলাল তদন্ত করতে সোমবার একলব্য ময়দানে যান। আন্দোলনে নেমেছে আদিবাসী সংগঠনগুলি। ময়দানে সংগঠনের পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারত মাঝি জাকাত পরগনার স্থানীয় সদস্য জয়দেব মুর্মু জানান, “এই ময়দানের সঙ্গে আমাদের ঐতিহ্য, আবেগ জড়িয়ে আছে। ধীরে ধীরে কী করে ব্যক্তি মালিকানায় তুলে দেওয়া হচ্ছে এই মাঠ? এর বিরুদ্ধে আমরা চরম আন্দোলনে নামব। দরকার হলে এ রাজ্যে দ্বিতীয় সাঁওতাল বিদ্রোহ হতে পারে।”
বনদফতরের দুর্গাপুরের রেঞ্জার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “একটি প্লটের অনুমতি নিয়ে অন্য প্লটে গাছ কাটা হচ্ছে এই অভিযোগ পাওয়ার পরে গাছ কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গাছগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।” রাজ্যের পঞ্চায়েত, গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ” অভিযোগ শুনেছি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী জঙ্গলমহলের কোনও জমি কোনও ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড করা যাবে না। জেলা প্রশাসনকে ঘটনার তদন্ত করতে বলা হয়েছে।” কাঁকসার বিডিও পর্না দে জানিয়েছেন, “সরকারি জমি ব্যক্তিগত নামে রেকর্ডের অভিযোগ আসার পর জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। চেষ্টা চলছে যাতে পুরনো অবস্থায় ময়দানকে ফিরিয়ে দেওয়া যায়।” লালন এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি দাবি করেন, দল তাঁকে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে বারণ করেছে। (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)।