বনেদী বাড়ির পুজো
কথিত আছে, অসুর নিধনের সময় দেবী দুর্গাকে অমৃত পান করিয়েছিলেন দুই সখী জয়া ও বিজয়া। ঘটক বাড়ির প্রতিমায় দেবীর দু’পাশে আছেন দুই সখী, জয়া ও বিজয়া। দেবী চেপে আছেন শ্বেত সিংহের উপর।
———————————————
সনাতন গরাই, কাঁকসা, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩: জয়া-বিজয়াকে সঙ্গে নিয়েই চারশো বছর ধরে পশ্চিম বর্ধমানের (Paschim Bardhaman) কাঁকসার মলানদিঘির ঘটক বাড়িতে আসছেন দেবী দুর্গা। পুজো হয় ঘটক বাড়ির নিজস্ব মন্ত্রে। কর্মসূত্রে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা ছেলে-মেয়েরা পুজো উপলক্ষে ঘরে ফেরেন। পুজোর চারদিন মেতে ওঠেন উৎসবের আনন্দে।কথিত আছে, অসুর নিধনের সময় দেবী দুর্গাকে অমৃত পান করিয়েছিলেন দুই সখী জয়া ও বিজয়া। ঘটক বাড়ির প্রতিমায় দেবীর দু’পাশে আছেন দুই সখী, জয়া ও বিজয়া। দেবী চেপে আছেন শ্বেত সিংহের উপর। শোনা যায়, অবিভক্ত বর্ধমান জেলার কাঁকসা ব্লকের মলানদিঘি এলাকায় পণ্ডিতদের বসবাস ছিল। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিল তর্কতীর্থ বংশ।
প্রায় ৪০০ বছর আগে তর্কতীর্থ বংশের পন্ডিতরা দুই সখী জয়া ও বিজয়াকে নিয়ে দেবী দুর্গার পুজোর প্রচলন করেছিলেন মাটির ঘরে। তখন অষ্টমী তিথিতে ছাগ বলিও দেওয়া হতো। আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য মধ্যাহ্ন ভোজনের ব্যবস্থা ছিল। একসময় তর্কতীর্থ বংশের অন্যতম পন্ডিত বিশ্বনাথ, তর্কতীর্থ কেন্দ্রের কাছে ঘটক উপাধি পায়। তখন থেকেই ঘটক বংশ হিসাবে পরিচিত লাভ করে তর্কতীর্থ বংশ।
কথিত আছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের প্রচলন করার সময় বহু শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিতের মতামত নিয়েছিলেন। ঘটক পরিবারের এক পূর্বপুরুষও সেই তালিকায় ছিলেন। তিনি বিদ্যাসাগরকে চিঠি লিখে জানান, শাস্ত্র বিধবা বিবাহ অনুমতি দেয়। তবে সেই সব চিঠি বহু আগেই ঘটক পরিবারের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। তাই প্রমাণ পাওয়া শক্ত।বিশ্বনাথ তর্কতীর্থর টোল চালু করেছিলেন। সেই টোলে শেখানো হতো পুজোর মন্ত্র। এই পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, নিজেদের লেখা পান্ডুলিপি দেখে হয় পুজো। অষ্টমীর দিন সাত রঙা বর্ণালীর পদ্মের ছবি এঁকে পুজো করা হয়। তবে প্রায় ২০০ বছর আগে বন্ধ হয়ে যায় ছাগ বলি। তারপর থেকে পুজোতে চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হয়।
দেবীকে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হয়। সিন্দুর খেলা হয় দশমীতে। চার দিন পর গ্রামের পুকুরেই হয় প্রতিমা নিরঞ্জন। মাটির মন্দির বদলে গিয়ে পাকা হয়েছে। তবে তর্কতীর্থ বংশের পন্ডিতের নিয়ম মেনেই হয়ে আসছে ঘটক পরিবারের দুর্গাপুজো। (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)।