সনাতন গড়াই, দুর্গাপুর দর্পণ, কেন্দুলি, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪: মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান করতে হাজার হাজার মানুষ এসেছিলেন জয়দেবের অজয়ে। কবি জয়দেবের ঐতিহ্যবাহী কেন্দুলিতে বসেছিল তিন দিনের মেলা। রাজ্য এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পূণ্যার্থীরা কাঁকসার বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুরের অজয়ের অস্থায়ী সেতু হয়ে কেন্দুলির মেলায় প্রবেশ করেছিলেন।
মকরস্নানের জন্য কাঁকসার কৃষ্ণপুর এবং জয়দেবের অজয় নদের তীরে পঞ্চায়েতের উদ্যোগে করা হয়েছিল স্নানের ঘাট। লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থী তিন দিন ধরে সেই অজয়ের জলে পুণ্যস্নান করেছিলেন। অধিকাংশ পূণ্যার্থীর হাতে ছিল প্লাস্টিকের প্যাকেট। সেই প্যাকেটে কেউ পুজোর সামগ্রী, কেউ খাবার, আবার কেউ সাময়িক অজয়ের তীরে বসে সময় কাটানোর জন্য প্লাস্টিকের ফ্রেক্স এনেছিলেন। সেই সব প্লাস্টিক আর ফিরিয়ে নিয়ে যাননি তাঁরা। আবার, বহু পূর্ণার্থী অজয়ের পাড়েই শৌচকর্ম সেরেছেন।
তিন দিন, তিন রাত ধরে অজয়ের তীরে বাউল গান ও কীর্তন শুনে পূণ্য অর্জনের পর যে যাঁর গন্তব্যে ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু এখন লক্ষ মানুষের ফেলে যাওয়া আবর্জনা বইছে শ্লথ গতির এই অজয়। প্লাস্টিক, প্লাস্টিক জাতীয় সামগ্রী ও আবর্জনা ভাসছে অজয় নদের জলে। দূষণের জেরে জলে ঘন ফেনার আস্তরণ পড়েছে। প্রবাহের মুখে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই প্লাস্টিকের পাহাড়। অজয়ের বালির চরে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেও শুধুই ব্যবহৃত প্লাস্টিক। এছাড়াও, অজয়ের বালির চরে মলের গন্ধে এখন টেকা দায়।
উদ্বেগে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং মৎস্যজীবীরা। স্থানীয় নবগ্রামের বাসিন্দা ও মৎস্যজীবী গোপীনাথ বাস্কির জীবন জুড়েই অজয়। ক্ষোভের সাথে তিনি জানান, “ভয়াবহ দূষণে আক্রান্ত আমাদের অজয়। আগে মকর স্নানের মুখে অজয়ে জল ছাড়তো। কিন্তু এবার তা ছাড়েনি। নদীর গতিপথ সংকীর্ণ হয়ে গেছে। তারপর লক্ষ লক্ষ মানুষের ব্যবহার করা প্লাস্টিক ও আবর্জনায় ঢেকে গেছে গোটা নদ। এবার এই নদ পরিষ্কার না হলে জল আর ব্যবহার করাই যাবে না।” স্থানীয় বাসিন্দা প্রিয়ব্রত ঘোষ জানান, “অজয়ের অস্থায়ী সেতু হয়ে যাতায়াত করতে গেলে শুধুই দুর্গন্ধ। অজয়ের জলে নামাও যাচ্ছে না।দ্রুততার সঙ্গে দূষণে জেরবার অজয় নদ এবং নদের চর সাফাই করা হোক।”
পঞ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের আচার্য প্রফুল্ল রায় বিজ্ঞান কেন্দ্র কাঁকসার সম্পাদক রমেশ মন্ডল বলেন, “অজয় এবং দামোদর নদ বাঁচাতে ধারাবাহিক সচেতনতা চলছে। জয়দেবের মেলা তিন দিন অজয়ের জলে যেভাবে প্লাস্টিক এবং নোংরা আবর্জনা ফেলা হয়েছে তাতে করে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা জেরেই বাড়ছে অজয়ে দূষণ।’’ তিনি দাবি করেন, অজয় নদ সাফাই করার জন্য ওই এলাকাতে তাঁরা বিশেষ সচেতনতা প্রচারে নামবেন।কাঁকসার বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গোপাল সরকার বলেন, “অজয়ের দুই পাড়ে মেলা। তিন দিন লাগাতার সচেতনতা চলেছে। আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা এবং শৌচালয় করা হয়েছিল শৌচকর্মের জন্য। তবে এখন যে আবর্জনা পড়ে আছে তা সরাতে দুই জেলা মিলিয়েই দ্রুততার সঙ্গে সাফাই অভিযান শুরু হবে।” (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)।