ছেলের ডান পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্বেও জমা দিতে হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। এখন আরও ৮০ হাজার টাকা চাইছে হাসপাতাল। তাহলে আর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে লাভ কী? উঠছে প্রশ্ন।
——————————————
দুর্গাপুর দর্পণ, দুর্গাপুর, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩: ছেলের ডান পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্বেও জমা দিতে হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। এখন আরও ৮০ হাজার টাকা চাইছে হাসপাতাল। কোনও রকমে দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পাওয়া পরিবার কোথা থেকে পাবে সেই টাকা? তাহলে আর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে লাভ কী? উঠছে প্রশ্ন।
পশ্চিম বর্ধমান (Paschim Bardhaman) জেলার দুর্গাপুরের ঘটনা। ওল্ড কোর্ট মোড়ের সবুজনগর এলাকার যুবক রবি কুমার রায় ২৫ সেপ্টেম্বর গিয়েছিল সিটি সেন্টারের আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) কার্য্যালয়ে কাজ করতে। আগের রাতে ভহাবহ অগ্নিকান্ডে ছারখার হয়ে গিয়েছে এডিডিএ। পরদিন চলছিল ছাই সরানোর কাজ। সেই কাজই করছিল রবি।
কাজ শেষ হওয়ার পরে বিকালে বাড়ি ফিরছিল সে। আচমকা গান্ধী মোড়ে সে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। একটি দ্রুতগতির ডাম্পার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডান পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ তাকে উদ্ধার করে পাশেই থাকা বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু রবিকে ভর্তি নিল না সেই হাসপাতাল।
এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিধাননগরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেও জায়গা হয়নি রবির। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিধাননগর ফাঁড়ি সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি নিল। কিন্তু জানিয়ে দিল, ৮০ হাজার টাকা জমা না দিলে চিকিৎসা হবে না। যেখানে যা ছিল সব জোগাড় করে ৮০ হাজার টাকা হাসপাতালে জমি দেন রবির বাবা শিউচন্দর।
পরদিন অস্ত্রোপচার করে পা কেটে বাদ দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার শিউচন্দর অভিযোগ করেন, হাসপাতাল ফের ৮০ হাজার টাকা চাইছে। না দিলে আর চিকিৎসা হবে না বলে জানিয়েছে। ছেলেকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখে আগের হাসপাতালগুলি ভর্তি নেয়নি। এই হাসপাতালে ভর্তি নিল। ছেলের পা কেটে বাদ চলে গেল।কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে কোনও কাজ হচ্ছে না। নগদ টাকা দিয়ে চিকিৎসা করতে হচ্ছে। আমার কাছে আর টাকা নেই। আমার একমাত্র ছেলে। আমি শেষ হয়ে গেলাম।’’
আগের হাসপাতালগুলি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য ভর্তি না নেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে জানিয়েছে, বেড না থাকায় ভর্তি নেওয়া যায়নি। এই হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার গৌতম সাহা জানান, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের বি ক্যাটাগরিতে তাঁদের হাসপাতাল থাকায় অস্ত্রোপচারের সব খরচ মিলবে না স্বাস্থ্যসাথী থেকে। এ-ক্যাটাগরির হাসপাতাল হলে মিলত। আগে নগদে হাসপাতালের বিল মিটিয়ে দিতে হবে। তারপরে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে টাকা পাওয়া যায় কী না দেখতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে নিরুপায় পরিবার যোগাযোগ করেছে মহকুমাশাসকের দফতরে। মিলেছে আশ্বাস। তবে বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে জেরবার রাজ্যের গরীব মানুষ। কেউ দেখার নেই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে শুধু প্রচারই সার। দুর্গাপুরের এই ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।’’ যদিও তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে জটিল সব অস্ত্রোপচার হচ্ছে। বিরোধীদের কাজই হচ্ছে নিন্দে করা।’’ (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)।