আধুনিক মহাকাশ যুগের সূচনা হয় ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে যখন ইউএসএসআর স্পুটনিক-১ উৎক্ষেপণ করে।
——————————————-
দুর্গাপুর দর্পণ, দুর্গাপুর, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪: “ভারতের জনজীবনের মানোন্নয়ন ও মহাকাশ শিক্ষার গুণমান উন্নত করা’ শীর্ষক মহাকাশ গবেষণা ও উন্নয়নের উপর জাতীয় সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল পশ্চিম বর্ধমানের (Paschim Bardhaman) দুর্গাপুরের Dr. B. C. Roy Engineering College (BCREC) কলেজে। ২৪ জানুয়ারি সেমিনার শুরু হয়। কলেজের দুলাল মিত্র প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত এই সেমিনার শেষ হয় ২৫ জানুয়ারি।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। উপস্থিত ছিলেন আইআইআরএস, দেরাদুন (ইসরো) এর গ্রুপ ডিরেক্টর ড. দেবাশিস মিত্র এবং ড. এ কে আশরাফ, ডেপুটি ডিরেক্টর, লিকুইড প্রপালশন সিস্টেম সেন্টার (এলপিএসসি), ত্রিবান্দ্রম, ষষ্ঠীব্রত কবিরাজ, সম্পাদক বিশ্বগন্ধা ফাউন্ডেশন (দুর্গাপুর বিশ্বগন্ধা সায়েন্স সোসাইটি), অধ্যাপক ড. সঞ্জয় এস পাওয়ার, অধ্যক্ষ, বিসিআরইসি, তরুণ ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক, বিসিআরইসি সোসাইটি, অধ্যাপক ড. সৈকত মৈত্র, উপদেষ্টা এবং ড. সৌরভ রঞ্জন দাস, প্রধান, বেসিক সায়েন্স ও হিউম্যানিটিজ বিভাগ।কলেজের বেসিক সায়েন্স (BCREC-BSH) বিভাগের উদ্যোগে এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো), এলপিএসসি ও বিশ্বগন্ধা ফাউন্ডেশন (দুর্গাপুর বিশ্বগন্ধা সায়েন্স সোসাইটি) এর সহযোগিতায় এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। দু’দিনের এই সেমিনারের উদ্দেশ্য, ভারতে মহাকাশ বিজ্ঞানের গুরুত্ব সম্পর্কে ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রদের ভারতের মহাকাশ ক্ষেত্রে কেরিয়ার গড়তে উৎসাহিত করা। বিসিআরইসি সোসাইটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সৈকত মৈত্র বলেন, “এই সেমিনারের লক্ষ্য, সাম্প্রতিক অতীতে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার কৃতিত্ব, প্রধান প্রধান মাইলফলক এবং ভবিষ্যতের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা পড়ুয়াদের সামনে তুলে ধরা।”
উদ্বোধনী বক্তৃতা দেওয়ার সময়, ডেপুটি ডিরেক্টর, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO)- লিকুইড প্রপালশন সিস্টেম সেন্টার (এলপিএসসি) ড. এ কে আশরাফ বলেন, ‘‘মহাকাশ গবেষণার নিত্য নতুন উদ্ভাবন এই ক্ষেত্রকে আরও উন্নততর রূপ প্রদান করছে। মহাকাশ গবেষণার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোতে হবে। তিনি বলেন, “হায়দার আলী এবং টিপু সুলতান সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে ‘বিশ্বের প্রথম রকেট’ তৈরি করেছিলেন যা তৎকালীন মহীশূর সেনাবাহিনী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। আধুনিক মহাকাশ যুগের সূচনা হয় ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে যখন ইউএসএসআর স্পুটনিক-১ উৎক্ষেপণ করে। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক বিজ্ঞান সাধনার জন্য ইসরো গড়ে তোলে। পরে যা কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরির পাশাপাশি ডিআরডিও-এর অধীনে ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের কাজ শুরু করে। ড. বিক্রম এ সারাভাই আমাদের দেশে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা উদ্যোগের জনক হিসাবে পরিচিত।’’ পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে, ড. এ কে আশরাফ চন্দ্রায়ণ-৩ পর্যন্ত প্রদর্শন করেন। দর্শকরা কার্যত মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তা দেখেন।
এই সেমিনারে গ্রুপ ডিরেক্টর, মেরিন অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার সায়েন্সেস গ্রুপ, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ রিমোট সেন্সিং, দেরাদুন, ড. দেবাশিস মিত্র ‘অ্যাপ্লিকেশন অফ রিমোট সেন্সিং’ এর উপর আলোচনা করেন। প্রযুক্তি এবং মানুষের প্রতিভার যৌথ ব্যবহারের মাধ্যমে বিজ্ঞানের গবেষণার অগ্রগতির উপর তাঁর প্রেজেন্টেশেন মুগ্ধ করে দর্শকদের। অধ্যাপক ড. সঞ্জয় পাওয়ার, অধ্যক্ষ, বিসিআরইসি, তরুণ ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক, বিসিআরইসি সোসাইটি, অধ্যাপক ড. সৈকত মৈত্র, বিসিআরইসি সোসাইটি, বিশ্বগন্ধা ফাউন্ডেশন (দুর্গাপুর বিশ্বগন্ধা সায়েন্স সোসাইটি) এর ষষ্ঠীব্রত কবিরাজ এবং বক্তাদের স্মারক ও ফুল দিয়ে সংবর্ধিত করেন। ড. সঞ্জয় পাওয়ার, অধ্যক্ষ বিসিআরইসি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের দৃষ্টিভঙ্গি এমন হওয়া উচিত যে আকাশও শেষ সীমা হবে না। উন্নততর কেরিয়ারের জন্য নিজেকে নিজেই ঠেলে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সরাসরি মহাকাশ প্রবৃদ্ধির খাতে অগ্রগতির ওপর নির্ভরশীল।’’
৩০ জানুয়ারি সেমিনারের দ্বিতীয় দিনে বিসিআরইসির অধ্যক্ষ ড. সঞ্জয় এস পাওয়ার এবং বেসিক সায়েন্স বিভাগের প্রধান ড. সৌরভ রঞ্জন দাস দু’জন বিশিষ্ট বক্তাকে সংবর্ধনা দেন। বিজ্ঞানী –সি, অপটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি বিভাগ, ইন্ডিয়ান সেন্টার অফ স্পেস ফিজিক্স, কলকাতা, ড. দেবেন্দ্র বিষ্ট, ‘মহাবিশ্বে নক্ষত্রের গঠন এবং বিবর্তন’ নিয়ে আলোচনা করেন এবং ব্ল্যাক হোল ও বিগ ব্যাং থিয়োরি এমনভাবে গল্পের ছলে ব্যাখ্যা করেন, উপস্থিত দর্শকরা যা শুনে মোহিত হয়ে যান। তিনি জানান, এই সেমিনারটি ভারতীয় মহাকাশ সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলির বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে। মহাকাশ সেক্টরের সর্বশেষ উন্নয়ন, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিত করবে উৎসাহী পড়ুয়াদের। এছাড়া সহকারী অধ্যাপক-২, আয়োনোস্ফিয়ার অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট এবং এক্স-রে অ্যাস্ট্রোনমি বিভাগ, ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স, কলকাতা ড. সৌরভ পালিত, ‘Interaction of High Energy Space Transients with Earth’s Atmosphere’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। দু’জনেই ভীষণ প্রাঞ্জল ভাষায় মহাকাশ বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলি দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন। সেমিনারের সমাপনী অধিবেশনটি উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. সৌরভ রঞ্জন দাস, প্রধান, বেসিক সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ বিভাগ। তিনি বেসিক সায়েন্স বিভাগের অন্যান্য ফ্যাকাল্টি এবং তরুণ উদ্যমী ছাত্র স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় ইভেন্টটিকে দারুণভাবে সফল করে তোলেন। (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)।