মা কালীর পুজোর রাতে ডাকাতরা তান্ডব চালাতে এলে এলাকাবাসীর সঙ্গে ডাকাতদের লড়াই শুরু করে। আচমকা প্রবল ঝড় আসে। ঝড়ের তাণ্ডবে এলাকা ছাড়ে ডাকাতরা।
——————————————-
দুর্গাপুর দর্পণ, কাঁকসা, ১১ নভেম্বর ২০২৩: বড় মায়ের তান্ডবে গ্রাম ছেড়েছিল ডাকাতরা। পশ্চিম বর্ধমান (Paschim Bardhaman) জেলার দুর্গাপুরের কাঁকসার ভগবানপুর গ্রাম ডাকাতদের অত্যাচারে শূন্য হয়ে গিয়েছিল। প্রাণ বাঁচাতে গ্রামের কয়েকশো মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন দুর্গাপুর-ফরিদপুর ও কাঁকসা ব্লকের জঙ্গলের মাঝে। জঙ্গলের মাঝেও হানা দিতে শুরু করে ডাকাতরা।
সেই সময় এলাকাবাসী কমলা বাগদি মা কালীর পুজো করার স্বপ্নাদেশ পান। কিন্তু পুজো করার খরচ ও আয়োজন করবে কে? সবাই মিলে তাঁরা গেলেন জমিদার ষষ্ঠীচরণ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। জঙ্গলের মাঝে মা কালীর পুজোর সূচনা করলেন জমিদার। শোনা যায়, মা কালীর পুজোর রাতে ডাকাতরা তান্ডব চালাতে এলে এলাকাবাসীর সঙ্গে ডাকাতদের লড়াই শুরু করে। আচমকা প্রবল ঝড় আসে। ঝড়ের তাণ্ডবে এলাকা ছাড়ে ডাকাতরা। এলাকাবাসীর ধারণা, সেই ঝড় ছিল আসলে মা কালীর তাণ্ডব।
গ্রামবাসীরা ওই মা কালীর নাম দেন ‘বড় মা’। তারপর সেখানেই কমলা বাগদি তালপাতা দিয়ে মন্দির তৈরি করেন। সেই মন্দিরে বড় মায়ের আরাধনার সাথে সাথে জঙ্গলের বসতিও গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে গ্রাম। সেই গ্রামের নাম হয় জামবন। আজ গ্রামের অধিকাংশ পাকা বাড়ি হয়েছে। বড় মায়ের মন্দিরও পাকা হয়েছে। কিন্তু গ্রামে শুধুই হয় বিপদের ত্রাতা বড় মায়ের পুজো।
এই গ্রামেই ছিল রাঢ়বঙ্গের সাধক কবি নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত চর্চার কেন্দ্র। তিনিও সেই মন্দিরে নিয়মিত বড় মায়ের পুজো করতেন। বড় মাকে নিয়ে অনেক গানও বেধেছেন নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায়। নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন কিন্তু সেই গান আজও শোনা যায় মন্দিরের পাশে মাটির বাড়িতে। নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায়ের আহব্বানে এই মন্দিরে এসেছেন কাজী নজরুল ইসলাম, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
আজও বড় মায়ের পুজোয় প্রায় হাজার মানুষের সমাগম। হয় ছাগবলি। কয়েক হাজার মানুষের জন্য থাকে খিচুড়ি প্রসাদের ব্যবস্থা। পুজোর পরের দিন স্থানীয় খুতুরপুকুরে বড় মাকে নিরঞ্জন করা হয়। বলা হয়, নিরঞ্জন করার সঙ্গে সঙ্গে ঝড় আসে। সেই ঝড় মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করে। এলাকাবাসী সুদেব রায় জানান, তাদের ধারণা ডাকাতদের তাণ্ডব থেকে রক্ষা করেছিল ঝড়ের মাধ্যমে নিজে তান্ডব দেখিয়ে। সেই ঝড় আজও আসে। আস্থা রেখে ভক্তিভরে প্রার্থনা করলে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। (বিশেষ বিশেষ ভিডিও দেখতে DURGAPUR DARPAN ইউটিউব চ্যানেলটিও সাবস্ক্রাইব করুন)।